বাংলায় একুশের যুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার পরই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর সম্ভাব্য গতিবিধি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ দিন কয়েক আগেই টুইটারে দেখা গিয়েছিল নতুন ট্রেন্ডিং — হ্যাশট্যাগ ইন্ডিয়া ওয়ান্টস মমতাদি! অর্থাৎ ভারত মমতাদিকেই চায়। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে গদিচ্যুত করাই যে তাঁর প্রধান লক্ষ্য, বুধবার নবান্নে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের সঙ্গে বৈঠক শেষে নিজেই তা স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘লক্ষ্য একটাই মোদীকে ক্ষমতা থেকে হঠানো।’ তাঁর অভিযোগ, ‘প্রধানমন্ত্রী ভাষণ ছাড়া আমাদের কিছুই দেননি।’
বুধবার রাকেশ টিকায়েত-সহ অন্যান্য কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুরু থেকে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে আছি। আমাদের অনেক সাংসদ সমর্থন জানাতে সেখানে গিয়েছিলেন।’ দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে এদিন সিঙ্গুর আন্দোলনের তুলনা টানেন মমতা। বলেন, ‘যত দিন দাবি আদায় না হল আন্দোলনকে সমর্থন করতে হবে। জোর করে কৃষকদের জমি নেওয়ার বিরোধী আমি। এ রাজ্যে এ জন্য আইনও তৈরি করেছি।’ তাঁর অভিযোগ, গায়ের জোরে কৃষি আইন পাস করেছে কেন্দ্র। ৭ মাস ধরে আন্দোলন চললেও, কেন সরকার কৃষদের সঙ্গে কথা বলছে না?
এর পরেই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় মুখর হন মমতা। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ থেকে কৃষি বিল সবকিছুতেই মোদী সরকারের প্রবল সমালোচনা করেন তিনি। আর এই প্রেক্ষিতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে দল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া নেতাদেরও বার্তা দিয়েছেন তিনি। যা এই মুহূর্তে বাংলার রাজনীতিতে যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। মমতা বলেন, ‘বিজেপির-ও পুরনো লোক আছেন। যাঁরা পুরনো ঘরানার মানুষ। আর যে যুবক নেতারা মোদীকে দেখে চলে গিয়েছেন। তাঁদের ফিরে এসে একাট্টা হয়ে হিন্দুস্তানকে বাঁচাতে, কৃষকদের বাঁচাতে, যুবকদের বাঁচাতে, শ্রমিকদের বাঁচানোর আবেদন থাকল আমার।’
শুধু তাই নয়, দেশের সমস্ত বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফ্রম তৈরি করার আবেদন জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর আহ্বান, ‘অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ঐক্যবদ্ধ হন। ফেডারেল স্ট্রাকচার বাঁচানো জরুরি। রাজ্য সরকারদেরও একটা ইউনিয়ন থাকা প্রয়োজন। যেখানে কোনও রাজ্যকে এঁরা হ্যারাস করলে অন্যরা ফাইট করবে।’ মমতার স্পষ্ট বলেন, ‘আমি আবারও দাবি করছি, কৃষকদের এই তিনটে বিল প্রত্যাহার করা হোক।’ পাশাপাশি কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করে বলেন, এখনও কোভিড পলিসি গাইডলাইন তৈরি হয়েছে কিনা কিছুই জানেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘এভাবে দেশ চলতে পারেনা। প্রধানমন্ত্রী ভাষণ ছাড়া আমাদের কিছু দেননি।’