সব ধর্মীয় সম্প্রদায়কে গুরুত্ব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নে শামিল করে রাজ্যে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে বেগ দিতে সঙ্ঘ পরিবারের সাজানো ছক ভেস্তে যেতে বসেছে বলেও আশঙ্কা করছে বিজেপি। ভোটের আগে রামমন্দির নিয়ে মাততে চাইলেও বাংলায় যে পায়ের তলায় মাটি পাওয়া যাবে না, সেটা এখন থেকেই টের পাচ্ছে গেরুয়া শিবির। আসন্ন রথযাত্রায় বাংলায় আদৌ সাড়া মিলবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে তারা।
মুসলিম পরব আর হিন্দু পার্বণের এই সমন্বয় হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীদের ছক ভেস্তে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একের পর এক আর্থিক নীতির জেরে গোটা দেশেই সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েছেন। এর সঙ্গেই গত কয়েক বছর ধরে ধর্মের ভিত্তিতে সামাজিক অসহিষ্ণুতা আমদানি করেছে সঙ্ঘ পরিবার। এত কিছু করেও উপর্যুপরি নানা স্তরের নির্বাচনে ক্রমশ পিছু হটছে বিজেপি। এই পটভূমিতে নয়ের দশকের রামমন্দির ইস্যু ফের খুঁচিয়ে তুলতে তৎপর হয়েছে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবার। তৃণমূলের এক সংসদ সদস্য বলেন, দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াক উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে নেত্রী গেরুয়া রাজনীতির মুখোশ খুলে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, হিন্দু সম্প্রদায়ের হিতাহিত সম্পর্কে বিজেপি’র একচেটিয়া দখলদারির তত্ত্ব মমতার সৌজন্যে বস্তুত নস্যাৎ হতে বসেছে বাংলায়। তাই মাস ছয়েক বাদে হতে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাতে রথযাত্রা থেকে এনআরসি’র দাবি বা নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহকে এনে সভা করানোর পরিকল্পনা থাকলেও সংশয় দানা বাঁধছে গেরুয়া বাহিনীর অন্দরে।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মতে, এনআরসি আর নাগরিকত্ব আইনের ধুয়ো তুলে বিজেপি মতুয়াদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে সচেষ্ট হয়েছে। উল্টোদিকে মুখ্যমন্ত্রী সেই মতুয়া ও নমঃশূদ্রদের উন্নয়নে পর্ষদ গঠনের মতো সদর্থক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিজেপি’র এক রাজ্য স্তরের নেতাঁর কথায়, মতুয়াদের নাগরিকত্ব বিতর্কের অবসানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা এখনও নিরসন হয়নি। এরই মধ্যে পর্ষদ গঠন করে মমতা যে তাঁদের চাপে ফেলে দিয়েছেন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, এ রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে প্রায় ৭৪টি আসনের জনমতে মতুয়াদের প্রভাব অনস্বীকার্য।