এ যেন কেঁচো খুড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়া! সিবিআইয়ের স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ীর থেকে মামলা ধামাচাপা দেওয়ার মূল্য হিসাবে ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন খোদ সিবিআইয়েরই এক তদন্তকারী কর্তা এ কে বাসসি।
প্রসঙ্গত, বাসসি বদলি হওয়ার আগে রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগেরই তদন্ত করছিলেন। সেই তদন্ত চলাকালীনই আচমকা গত ২৪ অক্টোবর সিবিআইয়ে গণরদবদল করে মোদি সরকার। সেদিন মধ্যরাতে নির্দেশিকা জারি করে ডিরেক্টর অলোক বর্মা এবং স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে যেতে বলা হয়। এবং সেই রাতেই নাগেশ্বর রাওকে অস্থায়ী সিবিআই ডিরেক্টর পদে বসিয়ে দেওয়া হয়।
নাগেশ্বর চেয়ারে বসেই একঝাঁক বদলির অর্ডারে স্বাক্ষর করেন। তিনি এ কে বাসসি-সহ অলোক বর্মা ও রাকেশ আস্থানার টিমে কাজ করা সব তদন্তকারী অফিসারদের সরিয়ে দেন। ঘটনাচক্রে সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মার নির্দেশে তিনিই ছিলেন আস্থানার বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষের অভিযোগের প্রধান তদন্তকারী অফিসার। তাঁকে বদলি করে দেওয়ায় হয় আন্দামানের পোর্টব্লেয়ারের। তবে তিনি সেই বদলিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। পাশাপাশি আরও বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন নিজের পিটিশনে।
সেখানে সুপ্রিম কোর্টকে তিনি বলেছেন, রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়াকে চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি গুটিয়ে এনেছিলেন। তার কাছে অকাট্য প্রমাণ আছে যে রাকেশ আস্থানা ৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। আরও কয়েকটি কিস্তিতে টাকা নেওয়া বাকি। এই অভিযোগের পক্ষে তিনি সুপ্রিম কোর্টকে ও সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারকে হোয়াটস অ্যাপ এবং ফোন কলের রেকর্ডও জমা দিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনার এই সামগ্রিক ঘুষকাণ্ডের অভিযোগের তদন্ত করছেন। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে দুই সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত সমাপ্ত করতে হবে। আর ১০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী একটি রিপোর্টও জমা করতে হবে।
গত ২৪ আগস্ট সিবিআই স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা ডিরেক্টর অলোক বর্মার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে সরাসরি সরকারের ক্যাবিনেট সচিবকে চিঠি লেখেন। ক্যাবিনেট সচিব সেই তদন্তভার অর্পণ করেন সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারকে। এরপর অক্টোবর মাসে ডিরেক্টর অলোক বর্মার নির্দেশে আস্থানার বিরুদ্ধেই ঘুষের মামলা রুজু হয়।
সিবিআইয়ের এই ‘গ্যাং ওয়ার’ থেকে যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হল, বিভিন্ন মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার-সহ শীর্ষ কর্তাদের মধ্যেও টাকার লেনদেন হয়। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সিবিআইয়ের একাধিক শিবির এই একই অভিযোগ পরস্পরের বিরুদ্ধে করেছে। ফলে, সিবিআই ঘুষ নিয়ে মামলা ধামাচাপা দেয়, এই বার্তাই এখন দেশবাসীর মনে ভীতির সঞ্চার করেছে। তাদের তদন্তে আস্থা হারিয়েছে মানুষ।