সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনে তাঁর মূর্তি উন্মোচন ঘিরে হইচই চলছে সারা দেশ জুড়ে। দেশের প্রায় সমস্ত কাগজের প্রথম পাতায় নরেন্দ্র মোদী ও প্যাটেলের মূর্তি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়ান দিবস?
এত আড়ম্বর, আয়োজনের মধ্যে হারিয়েই গেছে দেশের অন্যতম সফল প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার মৃত্যুদিবস। কেন্দ্রের তরফে না রাখা হয়েছে কোনও স্মরণ অনুষ্ঠান বা কোনও পুষ্পার্ঘ্য দেওয়ার কর্মসূচী। আর তাঁর নিজের দল কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অথচ এত ঘটনার মধ্যেও তাঁকে ভুলে যায়নি তৃণমূল।
ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু দিবসে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সবচেয়ে প্রথম যে রাজনীতিবিদ টুইট করেছেন তিনি আর কেউ নন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এইজন্যই তো তিনি জননেত্রী। খুঁটিনাটিতেও তাঁর কড়া নজর। ভুলচুক হওয়ার কোনও জো নেই। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুদিবসে সবার আগে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি নিজের অনন্যতাই প্রমাণ করলেন আরও একবার।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করেছেন আজ সকাল ৭ টা ১৭ মিনিটে। কংগ্রেস সভাপতি এবং প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর নাতি রাহুল গান্ধী টুইট করেছেন সকাল ৮ টা ১৬ মিনিটে। সেখানে ৩১ অক্টোবর গভীর রাত ১২টা ১ মিনিটেই টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন , ‘ প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাজীর মৃত্যুদিবসে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। দেশের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা এবং জোট নিরপেক্ষ দেশগুলির এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্ব এবং নিরস্ত্রীকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এর ভিত্তিতে এই দেশগুলির সম্পর্ক কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উদাহরণ স্বরূপ।’
সময় ক্রমানুসারে
মমতার এই বিচক্ষনতার কারণেই তিনি হয়ে উঠেছেন জননেত্রী। যিনি যোগ্য তাঁর কদর মমতা করবেন। সে ভিন্ন দল বা ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হলেও। তার উদাহরণ অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতি মমতার শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ। হাজার বিরোধিতা থাকলেও দুর্গাপুজোর সময় নতুন পাজামা পাঞ্জাবী পাঠিয়ে দিয়েছেন বাম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। বুদ্ধবাবুর স্ত্রী মীরাদেবীর কথা মনে রেখে তাঁর জন্যেও শাড়ি পাঠান মমতা। রাজনীতি থাকে রাজনীতির জায়গায়। মানবিকতাই মানুষকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে যায়। সেটা মমতা বোঝেন, জানেন এবং সেই মতো কাজও করেন।
একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে যা যা গুণ থাকা দরকার তা মমতার আছে। শুধু লোকসভায় দাঁড়িয়ে চোখ মেরে কিংবা ৫৬ ইঞ্চি ছাতি ফুলিয়ে বড় বড় ভাষণ দিলেই বড় রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না। তার জন্য মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে হয়। মমতা কাজ করেন। সেটাই তাঁর পরিচয়। ৩৪ বছরের বাম অপশাসনের অবসান ঘটিয়েছেন। এখন লড়ছেন বিজেপির বাঙালি বিদ্বেষ, অন্ধ সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিরুদ্ধে। আর এই লড়াইয়ে স্বাভাবিকভাবেই গোটা বাংলা আছে তাঁর পাশে।
দু’দিন ধরে তিনি কোচবিহারে আছেন। প্রশাসনিক সভা করেছেন। জনসভায় বক্তৃতা দিয়েছেন। ভবন, হাসপাতালের উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও তাঁর মাথায় আছে ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন মহান নেত্রীর মৃত্যুদিবসের কথা। যেখানে নিজের নাতি রাহুল গান্ধীর শ্রদ্ধা জানাতে সকাল হয়ে যায় সেখানে মমতা গভীর রাতেই টুইট করে শ্রদ্ধা জানান, স্মরণ করেন। বুঝিয়ে দেন কেন তিনি অন্য রাজনীতিবিদদের থেকে আলাদা। বুঝিয়ে দেন কেন তিনি এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অন্যতম দাবিদার।
কথায় আছে, বাংলা আজ যা ভাবে, দেশ কাল তা ভাবে। ইন্দিরার মৃত্যুদিবসে টুইট করে আক্ষরিকভাবে সেকথাই আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।