লাগামছাড়া মিথ্যাচারই বিজেপির প্রধান অস্ত্র। যা ফের একবার প্রকাশ্যে এল। যাঁর নিজের কোনও স্থায়ী ঠিকানা নেই, মাত্র ৫০০ টাকার এক চিলতে ভাড়া বাড়িতে দিন গুজরান করতে হয়, যাঁর বাড়িতে কোনও শৌচালয়ও নেই, অথচ মোদী সরকারের ‘আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলা’ বিজ্ঞাপনে তিনিই অন্যতম মুখ। তাঁর মুখ দিয়েই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নিজস্ব বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখানো হয়েছে আমজনতাকে। মোদী সরকারের এই মিথ্যাচারের পর্দাফাঁস করেছে একটি অনুসন্ধানীমূলক সংবাদ ওয়েবসাইট। আর তা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
এই ঘটনায় ফেরঅস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি। যার ফলে রীতিমত মুখে কুলুপ এঁটেছেন রাজ্যের শীর্ষ নেতারা। তাঁরা বিজয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয় বলে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সুযোগ পেয়ে মোদী সরকারকে বিঁধতে ছাড়েননি তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র তথা সাংসদ সৌগত রায়। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, “মিথ্যাচারই মোদী সরকারের বড় অস্ত্র। গত ছয় বছরের বেশি সময় সাধারণ মানুষকে একের পর এক ধাপ্পা দিয়ে চলেছেন।”
সম্প্রতি বাংলার বিধানসভার ভোটের মুখেই ‘আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলা’ নামে একাধিক বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে মোদী সরকার। গত ১৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। ওই বিজ্ঞাপনে এক মহিলার মুখ ছেপে দাবি করা হয়, তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মাধ্যমে নিজের ঘর পেয়েছেন, নিজের একটা ছাদ পেয়েছেন। এটাই নাকি মোদীর আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বাংলার নিদর্শন।
কিন্তু কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কার্যত কেউটে বেরিয়ে পড়েছে। যাঁর মুখ ছাপা হয়েছে সেই বছর আটচল্লিশের লক্ষী দেবী ধর্মতলার কাছে মলঙ্গা লেনের বাসিন্দা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি বাবুঘাটে সাফাইকর্মী হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। বিহারের ছাপড়াতে তাঁর বাড়ি হলেও কলকাতায় তখনও অবধি তিনি ফুটপাতেই থাকতেন। সেই সময়েই একটি এনজিও থেকে তার ছবি তোলা হয়েছিল বাবুঘাটেই। আর সেই ছবিই চলে এসেছে কেন্দ্র সরকারের বিজ্ঞাপনে।
এখন নানা সংবাদমাধ্যমের মারফত লক্ষ্মী জানতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছবি ছাপা হয়েছে আর তিনি নাকি কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে বাড়ি পেয়েছেন। যদিও বাস্তবে তিনি কোনও বাড়িই পাননি। এমনকী এই ছবি তাঁকে না জানিয়েই ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। লক্ষ্মীদেবী জানিয়েছেন, খুব সম্ভবত গঙ্গাসাগর মেলার সময় ওই ছবি তোলা হয়েছিল। কারণ তখন বাবুঘাটে তিনি ১০দিন সাফাই কর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাঁর নিজস্ব কোনও বাড়ি নেই। আগে ফুটপাতে থাকতেন, এখন মাসিক ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে একটি ছোট্ট ঘরে পরিবারের ৫ জনকে নিয়ে থাকেন তিনি। তবে এবারেই প্রথম নয়। এর আগেও উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনার বিজ্ঞাপনে যে মহিলার মুখ ছাপা হয়েছিল, তিনি কার্যত কখনও রান্নার গ্যাস ব্যবহারই করেননি। কাঠেই রান্না করেন। এভাবে একের পর এক মিথ্যাচারে ভোটের আগে ফের মুখ পুড়েছে বিজেপির।