একুশে বাংলায় ক্ষমতা দখলের আশা নেই বুঝে বিজেপি যে কতটা মরিয়ে হয়ে উঠেছে, এবং যেনতেনপ্রকারেণ ভাবে তাদের লক্ষ্য পূরণের জন্য ভাঁওতাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে এবার ফের তা প্রমাণ হয়ে গেল। সম্প্রতি বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে ৭৫ লক্ষ যুবক-যুবতীকে চাকরিতে দেওয়ার যে ‘টোপ’ দিয়েছিলেন, এবার ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে তা থেকে সরে এল বিজেপি।
গত ১৩ ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় এবং দলের যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ চাকরির প্রতিশ্রুতি কার্ড প্রকাশ করেছিলেন। সৌমিত্র জানিয়েছিলেন, ওই কার্ড নিয়ে ৭৫ লক্ষ যুবক-যুবতীর বাড়ি যাওয়ার কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘বিজেপি চার মাস বাদে রাজ্যে ক্ষমতায় আসছে। তাই আগামী ২ মাসের মধ্যে বিজেপি পৌঁছে যাবে ৭৫ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতীদের কাছে। দলের তরফেই তাঁদের নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করে রাখা হবে। একুশের নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরই ওই ৭৫ লক্ষ যুবক-যুবতীকে চাকরিতে নিয়োগ করা হবে।’
সৌমিত্রর ওই ঘোষণার পরে রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা ছিল, চাকরি পেতে আগ্রহী এবং তাঁদের পরিবার-পরিজনদের ভোট বিজেপি এইভাবে সংগ্রহ করতে চায়। তৃণমূলও প্রথম থেকেই বলে আসছিল এই ধরনের কাজ শুধু নীতি বহির্ভূতই নয়, চরম ভাঁওতা। এখন বিজেপি সূত্রের খবর, শুধু দলের বাইরে নয়, সৌমিত্রর ওই ঘোষণার পরে দলের অন্দরেও একাধিক আশঙ্কা এবং প্রশ্ন দেখা দেয়। দলেরই অনেক নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই ভাবে চাকরির প্রতিশ্রুতি কার্ড নিয়ে কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেতে দেওয়া হলে দুর্নীতি হতে পারে। বিধানসভা ভোটের আগে দলের ভাবমূর্তিতে ওই কালি লাগার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না বলে মত দেন তাঁরা।
দলের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, রাজ্যে কর্মপ্রার্থীদের নাম নথিভুক্ত করার নির্দিষ্ট সরকারি সংস্থা রয়েছে। সরকারি চাকরি পেতে হলেও নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। সুতরাং দল সরকারে এলেও রাজনৈতিক ভাবে ফর্ম পূরণ করিয়ে কর্মপ্রার্থীদের চাকরি দেওয়া কী ভাবে সম্ভব? আর তা সম্ভব না হলে প্রতিশ্রুতি পালন না করার যে দায় দলের ওপরে আসবে, তার জবাব কী হবে? কয়েক জন নেতা দলের অন্দরে আরও বলেন, বিজেপি দেশের কোথাও কাউকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। এখানে ‘চাকরি’র প্রতিশ্রুতি দিলে মানুষ বিভ্রান্ত হবেন। এই প্রেক্ষিতেই ‘চাকরির প্রতিশ্রুতি কার্ড’ নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়ার কর্মসূচী আপাতত স্থগিত করে দিয়েছে বিজেপি।