এবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে লিভার প্রতিস্থাপনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসার সুযোগ পেতে চলেছেন রাজ্যের এক সরকারি কর্মী। লিভার প্রতিস্থাপনের খরচ বাবদ রাজ্য সরকারের গ্রুপ-ডি কর্মী শেখর দে’কে ২২ লক্ষ টাকা সাহায্য করলেন মমতা। ডোনার হিসাবে তাঁর পরিবারের এক সদস্যকে দেওয়া হবে আরও ২ লক্ষ টাকা।
আর পাঁচটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে যে তিনি বরাবরই আলাদা, আরও একবার তা প্রমাণ করে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবারও তার মানবিকতার পরিচয় পেল রাজ্যবাসী। শেখর দে খাদ্য দপ্তরের গ্রুপ-ডি পদে কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লিভারের জটিল রোগের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হায়দরাবাদের ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ গ্যাসট্রোয়েনট্রোলজি’-র চিকিৎসকরা। লিভার প্রতিস্থাপনের খরচ পড়বে আনুমানিক ২২ লক্ষ টাকা। চিকিৎসার প্রয়োজনে এই বিপুল পরিমাণ টাকা রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্প থেকে শেখরবাবুকে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। অর্থ দফতর সূত্রে খবর, ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ইতিমধ্যেই শেখরবাবুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
গ্রুপ ডি কর্মীর চিকিৎসার জন্য এই রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদিচ্ছার প্রতিফলন বলে দাবি করেছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যেতিপ্রিয় মল্লিক। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একজন গ্রুপ-ডি কর্মচারীকে সুস্থ করে তুলতে ২৪ লক্ষ টাকা মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য প্রদান সারা দেশে নজির।’ উল্লেখ্য, সরকারি কর্মীদের স্বাস্থ্য প্রকল্পে ক্যাশলেস চিকিৎসায় ঊর্ধ্বসীমা এক লক্ষ টাকা। এর অতিরিক্ত যে খরচ তা নগদে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে মেটাতে হয়। পরে আবেদন সাপেক্ষে বাড়তি অর্থ সরকার মিটিয়ে দেয়। কিন্তু শেখরবাবুর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এক মানবিক দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। এমনকি, ডোনারকেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন তিনি।
গত জুন মাসে যখন কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁর লিভারে ক্যান্সার হয়েছে বলে জানিয়ে দেন, তখনই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল গল্ফগ্রিনের বাসিন্দা শেখরবাবুর। চিকিৎসকদের মতে, মারণরোগ মুক্তির একমাত্র লিভার প্রতিস্থাপনে সম্ভব। কলকাতার চিকিৎসকদের সুপারিশে হায়দরাবাদের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ গ্যাসট্রোয়েনট্রোলজিতে যোগাযোগ করেন শেখরবাবু। সেখান থেকে লিভার প্রতিস্থাপনের বাজেট দেওয়া হয়েছিল ২২ লক্ষ টাকা। পরিবারের যে আর্থিক অবস্থা তাতে এককালীন এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় কপির তাঁর স্বপ্নেরও অতীত ছিল বলে জানান শেখরবাবু। তখনই দফতরের উর্ধ্বতন সহকর্মী সুকল্যাণ দাশগুপ্ত তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনের পরামর্শ দেন। এরইমধ্যে বিভাগীয় মন্ত্রী জ্যেতিপ্রিয়বাবুর কাছেও শেখরবাবুর অসুস্থতার খবর পৌঁছে যায়। তিনিও ব্যক্তিগতভাবে তৎপর হয়ে ওঠেন। দফতরের সহকর্মী ও খাদ্যমন্ত্রীর সাহায্যে এবং সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছায় তাঁর এই চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠেছে বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী, সুকল্যাণ দাশগুপ্ত ও মনিরুল ইসলাম সহ সব কর্মীকে। এঁদের সাহায্য না পেলে আমি হায়দরাবাদে চিকিৎসার জন্য যেতে পারতাম না।’।রোগ নিরাময়ের স্বপ্ন নিয়ে আগামী ৯ অক্টোবর, অর্থাৎ আসন্ন দেবীপক্ষেই হায়দরাবাদ যাচ্ছেন শেখরবাবু।