বাংলার ও বাঙালির সংস্কৃতি বরাবরই উত্তর ভারতের তুলনায় আলাদা। রামনবমী, দিওয়ালি, দশেরা, নবরাত্রি এই সবই উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতি। সেখানে বাঙালি কোনোদিনই নাক গলায়নি। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বারংবার লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মদতে বাংলাতেই বাংলার সংস্কৃতি ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে। তাদের হাত ধরেই উত্তর ভারতীয় গো-বলয়ের সংস্কৃতি উড়ে এসে জুড়ে বসছে বাংলার মাটিতে।
বেশ কয়েকবছর ধরেই দেখা গিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের আহ্বানে রামনবমী পালন হচ্ছে। আর সেখানে অস্ত্র হাতে মিছিলে হাঁটছেন সেই হেভিওয়েট নেতারা। যার পরে গোটা সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের কটাক্ষের শিকার হয়েছেন তাঁরা। বাংলা বিরোধী হিসাবেই তাঁদের হেয় করা হয়েছিল। যদিও এতে বিন্দুমাত্র প্রভাব তাঁদের ওপর পড়েনি। বরং বারংবার সেই বিজেপি নেতাদের প্রচেষ্টাতেই উত্তর ভারতের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বাংলার ওপর।
আজ হিন্দু বাঙালি ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। তাঁর রূপ আমাদের কারোরই অচেনা নয়। এই রূপে দেবীর দুই হাত। তিনি আবিষ্ট থাকেন একটি পদ্মের ওপর। তাঁর এক হাতে থাকে ধানের শিষ ও অপর হাতে গাছকৌটো। নীচে থাকে বাহন পেঁচা। কিন্তু উত্তর ভারতে পদ্মাসনে বসে থাকা দেবীর হাতে না থাকে গাছকৌটো, আর না থাকে পেঁচা। বরং দেখা যায়, সেই ‘লক্ষ্মীমাতা’র চার হাত। ওপরের দুই হাতে থাকে পদ্ম এবং নীচের হাতগুলিতে থাকে মোহরের প্রতিচ্ছবি।
কোজাগরী পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার সংস্কৃতি মেনেই ‘মা লক্ষ্মী’র বঙ্গবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কিন্তু আসানসোল লোকসভার বিজেপি সাংসদ তথা মোদী সরকারের মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় চতুর্ভূজা ‘লক্ষ্মীমাতা’র ছবি টুইট করেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সেই নিয়েই ফের নেটিজেনদের রোষানলে পড়েছেন এই বিজেপি নেতা। অগ্নিভ নিয়োগী নামের একজন টুইটার ব্যবহারকারী এই দুটি ছবিই পাশাপাশি পোস্ট করে লিখেছেন, “বাঁদিকের চিত্রটি বাঙালির উপাসনা করা মা লক্ষ্মী। আর ডানদিকে চিত্রটি উত্তর ভারতীয়দের উপাসনা করা লক্ষ্মী মাতা। এবার আপনিই অনুমান করুন, কোন পক্ষটি বাঙালি বিরোধী? এর জন্য কোনও পুরস্কার নেই।” একইসঙ্গে, রাজ্যবাসীকে এই চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি আটকাতে বিজেপিকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন কেউ কেউ।