ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আধার বাধ্যতামূলক কি না সে বিষয়ে আজ ঐতিহাসিক রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গোপনীয়তা রক্ষার সাংবিধানিক অধিকার খর্ব হওয়ার উল্লেখ করে, শীর্ষ আদালতে আধার আইনের বিরোধিতা করে একাধিক পিটিশন জমা পড়ে। সেই মামলাতেই ঘোষণা সুপ্রিম কোর্টের।
আধার সাংবিধানিকভাবে বৈধ, জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। কিন্তু নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে আধার কর্তৃপক্ষকে। কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নাগরিকের থেকে আধার তথ্য চাইতে পারবে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট৷ কোনও মোবাইল কোম্পানি আধার কার্ড চাইতে পারবে না৷ মোটের উপর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আধারকে আবশ্যিক করল না সুপ্রিম কোর্ট৷
সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার লিঙ্ক বাধ্যতামূলক নয়৷ গত বছর শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, ব্যক্তিগত অধিকার একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। আজকের রায়ে তাই আবারও মান্যতা পেল নাগরিক অধিকার।
আধার নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক জলঘোলা হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে আধারের তীব্র বিরোধী বিজেপি রাতারাতি ভোল পাল্টে আধারের স্বপক্ষেই আইন আনে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে মোবাইল, সরকারি পরিষেবা থেকে শুরু করে পেনশন – সব কিছুতেই আধার বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে কেন্দ্র। মহাফাঁপরে পড়েন সাধারণ মানুষ।
এর সাথে যুক্ত হয় অসাধু ব্যবসার রমরমা। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে কিছু অসাধু সংস্থার সহায়তায় পুরো দেশের মানুষের সমস্ত ব্যাক্তিগত তথ্য যে কেউ পেয়ে যেতে পারে। এই তথ্য নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিড-ডে মিল ও আইসিডিএসের জন্যও আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার জন্য কেন্দ্রীয় সকারের করা সমালোচনা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
২০১৭ সালে তিনি টুইটারে লেখেন, “আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার কেন্দ্রের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গরীব ও প্রান্তিক মানুষরা। ১০০% মানুষ আধার কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করতে পারে না কেন্দ্র।” তিনি আরও বলেন আধার এর সাথে ব্যক্তি-গোপনীয়তার অনেক সমস্যার এখনো সুরাহা হয়নি।
গত বছর অক্টোবর মাসে নজরুল মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আধার কার্ড ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “কথায় কথায় বলছে আধার কার্ড চাই। জানেন আধার কার্ড দিলে কী হতে পারে ? স্বামীর সঙ্গে স্ত্রী কী নিয়ে কথা বলছে তা সরকার জেনে যাবে। সেটা বিজেপি দপ্তরে পাঠিয়ে দেবে। আমি আমার নম্বরে কার সঙ্গে কথা বলব, তা তোমার জানার অধিকার নেই।”
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি, মোবাইল নম্বরের জন্য আধার কার্ড দেব না। তাতে যদি আমার নম্বর কেটে দেয়, কেটে দেবে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা আমার অধিকার।” মঞ্চে উপস্থিত দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি আধার কার্ড দেব না। আপনারা কেউ দেবেন ?” পালটা মুখ্যমন্ত্রীর সুরে নেতা-কর্মীরা বলেন, আমরাও কেউ মোবাইল নম্বরের সঙ্গে আধার নম্বর দেব না।
আজকের এই সুপ্রিম কোর্টের রায় আবারও প্রমাণ করল দেশের সাধারণ নাগরিকের স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমতই ছিল বাস্তবসম্মত এবং সঠিক। সারা দেশে একমাত্র তিনিই হুঙ্কার দিয়েছিলেন যে মোবাইল কোম্পানিকে আধার দেবেন না। সেই দাবিও মান্যতা পেল আজ। আরেকবার প্রমাণিত হল ভারতবর্ষের সবচেয়ে দূরদর্শী রাজনীতিক এই মুহূর্তে একজনই – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )