বডসড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচল জেট- এর বিমান। বিমান যখন মাঝ আকাশে, ঠিক তখনই ঘটল বিপর্যয়। বিমানকর্মীর ভুলে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হচ্ছিলেন জেট এয়ারওয়েজের ১৬৬ জন যাত্রী।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ জেট এয়ারওয়েজের বিমান ৯ ডব্লু ৬৯৭, ১৬৬ জন যাত্রী নিয়ে মুম্বই থেকে জয়পুরের উদ্দেশে উড়ান শুরু করেছিল। অথচ বিমানের বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রক সুইচ অন করতেই ভুলে গেছিলেন পাইলট বা অন্য বিমানকর্মীরা! সেই অবস্থায় ৫ থেকে ১০ মিনিট ওড়ে বিমানটি। উড়ানের কিছু সময়ের মধ্যে শ্বাসজনিত সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। অক্সিজেন ও বায়ুর চাপের বিভ্রাটে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় যাত্রীদের। বিমানের ১৬৬ জন যাত্রীর মধ্যে ৩০ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের নাক ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি মাথা যন্ত্রণাও শুরু হয়ে যায়। অক্সিজেন মাস্ক পড়া সত্ত্বেও সমস্যা বাড়তেই থাকে। তখনই পাইলট বুঝতে পারেন বিমানের ভিতর এয়ার প্রেশার বা বায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণের সুইচটি অন করা হয়নি। এরপর পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে যোগাযোগ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মুম্বই বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে বিমানটি। বিমান জরুরি অবতরণ করায় বড়সড় বিপদের হাত থেকে বেঁচে যান যাত্রীরা। তবে দেখা যায় ৫ জন যাত্রী আংশিকভাবে বধির হয়ে গেছেন। তারপর বিমান থেকে দ্রুত নামিয়ে বিমানবন্দরেই প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয় সকলকে। ৫ জনকে মুম্বইয়ের ডা. বল্লভভাই নানাবতী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার ডা. রাজেন্দ্র পাটঙ্কর জানান, ৫ জন যাত্রী ‘বারোট্রমা’য় আক্রান্ত। সুস্থ হতে দিন দশেক লাগবে।
এদিকে ওই বিমানেরই দর্শক হাতি নামের এক যাত্রী, ওই সময়ে ঘটনাটির ভিডিও তুলে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আতঙ্কিত যাত্রীদের মাথার ওপর অক্সিজেন মাস্ক ঝুলছে। অনেকের নাক-কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। এই ভিডিও দেখে, জেট কতৃপক্ষের চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেকেই। মুম্বইয়ের প্রশান্ত শর্মা ওই বিমানে ছিলেন। তিনি বলেন,‘আমি সিঁড়ির সামনের আসনে বসেছিলাম। হঠাৎ কেবিনের বায়ুর চাপ কমে যায়। অক্সিজেন মাস্ক নীচের দিকে ঝুলে আসে। আমার সামনের যাত্রীর নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। কানের যন্ত্রণায় অনেকে কাতরাচ্ছিলেন।’ আরেক যাত্রী বলেন, ‘বিমান অবতরণের ঘোষণা করা হল। অথচ সমস্যা সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা করলেন না ক্রু-রা।’
এ ঘটনায় আসমরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক তদন্ত রিপোর্ট তলব করেছে। তদন্ত করছে এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে বিমানের পাইলট এবং দায়িত্বে থাকা কেবিন ক্রু-দের সাসপেন্ড করা হয়েছে। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী সুরেশ প্রভু সমস্ত উড়ান সংস্থা এবং বিমানবন্দরগুলিকে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেখানে সামান্য ভুলত্রুটি হলেই বিপদ ঘটতে পারে, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ওই সুইচটি অন করতে কেন ভুলে গেলেন কেবিন ক্রু! তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উড়ান বিশেষজ্ঞরা। বিমান টেক অফ করার আগে কেবিন প্রেশার সুইচের বিষয়টি দেখে নিতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে বিষয়টি যে সম্পূর্ণভাবেই গাফিলতির জন্য হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় কথা কেবিন ক্রু সুইচ অন করার কথা ভুলে গেলেও দুই পাইলট ক্রস চেকিং করতে ভুলে গেলেন কী করে? কারণ, টেক অফ মুহূর্তে লাস্ট-মিনিট চেক বলে একটি গাইডলাইন থাকে। পাইলটদের তা চেক করে নিতে হয়। কেবিন প্রেশার মূলত আকাশে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ, বিমান অন্তত ৩০ হাজার ফুট উপর দিয়ে যায়। টেক অফের পর দ্রুত বিমানকে একটা বিশাল উচ্চতায় চলে যেতে হয়। এত উপর দিয়ে বিমান গেলেও যাত্রীরা সহজে অক্সিজেনের অভাব টের পান না। কেবিনের মধ্যে অক্সিজেনের অভাব তৈরি হলে যাত্রীরা শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে বমি, মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যার সম্মুখীন হন। অক্সিজেনের অভাবে শরীরে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে। শ্বাসকষ্ট, নাক, কান দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসা, এমনকী হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারেন। এই ঘটনা বেশিক্ষণ চললে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
তবে জেট এয়ারওয়েজের পক্ষ থেকে বিষয়টি লঘু করে দেখানো হয়েছে। বিমান সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি নিরাপদেই অবতরণ করেছে। ককপিট কেবিন ক্রু-দের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই এই বিপর্যয়। কয়েকজন যাত্রীর কান ও নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়ায় তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। সকাল ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ ফের বিমানটি জয়পুরের দিকে রওনা হয়।