একে তো বারবারই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে প্রত্যাখানের। তারপরেও বড় মুখ করে ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলেছিল। তবে তাতে বিশেষ সুবিধা না হওয়ায় হুমকি দেওয়া হয়েছিল বন্ধ করে দেওয়া হবে শহরের বুকে ট্যাক্সি চলাচল। কিন্তু তাতেও কান দেয়নি সরকার। অগত্যা সরকারের বিনা অনুমতিতেই নিজেদের ইচ্ছামতো খুশিমতো ভাড়া হাঁকাচ্ছিল তারা। কিন্তু এবারে মুখ ফেরালো জনতা। চড়া হারে দর দিয়ে এই করোনা কালে হলুদ ট্যাক্সি চড়ার মানসিকতা দেখাতে রাজি হয়নি কলকাতা ও শহরতলির যাত্রীরা। অগত্যা নিজেদের বাড়ানো ভাড়া নিজেরাই সুর সুর করে কমিয়ে আবারও আগেকার ভাড়াতেই ফিরে আসতে বাধ্য হল হলুদ ট্যাক্সির চালকেরা।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে প্রশাসনের কোনও অনুমতি না নিয়েই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছিল শহরের ট্যাক্সি চালকেরা। সেই ভাড়া চালু হয়ে যায় ১ আগস্ট থেকে। ট্যাক্সিতে উঠলেই চাওয়া হচ্ছিল ৫০টাকা। তারপর প্রতি কিলোমিটার পিছু নেওয়া হচ্ছিল ২৫ টাকা করে। কিন্তু সেই চড়া হারে ট্যাক্সি চাপতে রাজি হয়নি শহরবাসী। কার্যত শহরের নাগরিকেরাই হলুদ ট্যাক্সিকে ব্রাত্য করে দেন। যার ফলে যাত্রীর অভাবে ট্যাক্সি চালকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। শেষে নিজেরাই বাধ্য হয় আগেকার ভাড়ায় ফিরে আসতে। রবিবার সকাল থেকেই কার্যত আগেকার ভাড়াতেই যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে শহরের হলুদ ট্যাক্সি। অর্থাৎ উঠলেই ৩০ টাকা আর তারপর কিলোমিটার পিছু ১৫টাকা ভাড়া।
শুক্রবার সন্ধ্যাতেই বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহ সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেন, ‘এখন পুরনো ভাড়াতেই পরিষেবা দেওয়া হবে।’ তিনি এ-ও জানান যে, ‘করোনার কারণে মানুষ সমস্যায় রয়েছেন। মানুষের হাতে টাকা নেই। তাঁরা বেশি ভাড়া দেবেন কোথা থেকে? অনেকে ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়েছিলেন। তাই এখন পুরনো ভাড়াই নেওয়া হবে। কলকাতায় এখন হাজার সাতেক ট্যাক্সি চলে তাঁরা রবিবার সকাল থেকে পুরানো ভাড়া মেনেই যাত্রী তুলবেন।’ কিন্তু প্রশ্ন হল, মানুষের এই অসুবিধা তাঁরা আগে বুঝতে পারেননি কেন? গায়ের জোরে নিজেদেরে ইচ্ছা মতো ভাড়া বাড়িয়ে আবারও পিছু হঠতে হল কেন? আর সব থেকে বড় কথা সরকারের অনুমতি টুকু নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি কেন তাঁরা?
এই সব প্রশ্নের উত্তর না মিললেও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, গেরুয়া শিবিরের প্রছন্ন মদত ও উস্কানিতেই ভাড়া বৃদ্ধির পথে এতটা বৈপ্লবিক হয়ে উঠেছিলেন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। তাঁদের বোঝানো হয়েছিল শহরের পথ থেকে ট্যাক্সি উধাও হয়ে গেলে আমজনতা রাজ্য সরকারকেই দোষ দেবে আবার রাজ্য সরকারের বিনা অনুমতিতে ভাড়া বাড়িয়ে দিলে রাজ্য সরকারের যে কোনও রাশ নেই ট্যাক্সি সংগঠনের ওপরে তাও বলা যাবে। কিন্তু বাস্তবে শহর থেকে ট্যাক্সি উধাও হয়ে গেলে যা তাতে এই করোনা কালে আমজনতার যে কিছু এসে যাবে না সেটাই ট্যাক্সি চালকদের ইউনিয়নের নেতারা বুঝে উঠতে পারেননি। কার্যত জনতার প্রত্যাখান তাঁদের এখন বাস্তবের মাটিতে এসে দাঁড় করিয়েছে।