ব্যাংকের এক গ্রাহক বাংলায় ডিপোজিট ফর্ম পূরণ করেছিলেন। লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দেওয়ার আগে ডিপোজিট স্লিপ ব্যাংক কর্মীকে দিতেই ক্যাশ কাউন্টার থেকে ব্যাংক কর্মী বললেন, “বাংলায় ফর্ম ফিলাপ করা যাবে না। ইংরেজিতে বা হিন্দিতে করুন”। গ্রাহক দৃঢ় ভাবে জানিয়ে দেন, “বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলাতেই ফর্ম ফিলাপ করতে আমি স্বচ্ছন্দ, আমি হিন্দি জানি না।” উল্টোদিক থেকে ব্যাংক কর্মী বেশ জোরের সঙ্গে জ্ঞান দিয়ে বললেন, “হিন্দি ভারতের রাষ্ট্রভাষা। হিন্দি না শিখলে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে চলে যান।”
কথোপকথনটা কাল্পনিক মনে হলেও আসলে সত্যি। এই ঘটনাটা ঘটেছে বাংলার বুকে, খোদ কলকাতার এইচ ডি এফ সি ব্যাংকের ইউ এন ব্রহ্মচারী শাখায়। বাংলায় ফর্ম পূরণ নাকি অপরাধ! হিন্দি শেখাই নাকি বাঞ্ছনীয়! না হলে, ঠিকানা হবে বাংলাদেশ বা পাকিস্তান। বাঙালি নিজের মাটিতে বাংলায় কাজ করলে তার এই শাস্তি! আমরা বিগত কয়েকবছর ধরে দেখছি খুব সহজে কথায় কথায় “পাকিস্তান যা!” বলে দেওয়া হচ্ছে, কারা করছে তা বুঝতে কারোরই অসুবিধা হওয়ার কথা না। এই ভাইরাস সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে কিছু মানুষের মাথায় ঢুকছে। এই ভাইরাসের প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে ব্যাংকের কর্মী অবধি বাংলায় ফর্ম পূরণ করায় গ্রাহককে পাকিস্তানে যেতে বলছেন। আমরা আজকাল দৈনন্দিন জীবনে এসব ঘটনা দেখছি।
সেদিন কথাটা বলেছিলেন বাঙালি ব্যাংক কর্মী মনোজিৎ দাস। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি, কথাটা কাকে বলছেন। বাঙালি জাগছে, বাঙালি সংঘবদ্ধ হচ্ছে। এক সচেতন বাঙালিকে এভাবে অপমান? সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে মেইল করে বিস্তারিত জানান গ্রাহক অমিত সেন। তারপর “বাংলা পক্ষ” সংগঠনের তরফে গর্গ চ্যাটার্জি ট্যুইট করেন এইচ ডি এফ সি ব্যাংকের ম্যানেজমেন্টকে ট্যাগ করে। ট্যুইটার, ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায় এই ঘটনা। উত্তর দেয় এইচ ডি এফ সি ব্যাংক, ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। ভারতের নানা প্রান্ত থেকে পাশে থাকার বার্তা আসে। এই ঘটনার প্রতিবাদ এক আন্দোলনের রূপ নেয়। “বাংলা পক্ষ”-র কর্মীরা ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়েছিলেন। তখন ক্ষমা চেয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ! তারপর “বাংলা-পক্ষ” সংগঠন চার দফা দাবি ব্যাংক কতৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।
এক – ওই ব্যাংকের কর্মীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বিবৃতি দিতে হবে এই মর্মে।
দুই – এ রাজ্যে এইচ ডি এফ সি ব্যাংকের সব এটিএমে বাংলা থাকতে হবে। সময়সীমা এক মাস।
তিন – ব্যাংকের প্রতিটা শাখায় বাংলায় ফর্ম থাকতে হবে, সময়সীমা তিনমাস।
চার – বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষী ওই কর্মীকে বাংলার বাইরে বদলি করতে হবে।
কর্তৃপক্ষ দাবিগুলি মেনে নিয়েছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে দাবি পূরণ না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে। আর বি আই এর নিয়ম অনুযায়ী বাংলায় বাংলা ভাষায় কাজের সুযোগ থাকা জরুরী। সে নিয়ম মানা তো হচ্ছেই না, উলটে গ্রাহকদের অপমান করা হচ্ছে। বাঙালি আর এই অপমান মানবে না। বাঙালি সংগঠিত হচ্ছে। এই ভারতের মাটিতে বাঙালির প্রাপ্য অধিকার বাঙালি বুঝে নেবে। সব ব্যাংকের কাজকর্মে বাংলা থাকুক। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে সহজ করতে বাংলায় কাজকর্মের সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )