গোটা বিশ্বেই বিগত কয়েক মাস ধরে হাজারও গবেষণা চলছে, পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশই করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে এবার শোনা গেল বাকিদের পিছনে ফেলে একেবারে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের দোরগোড়ায় ব্রিটেনের ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। কোভিড ভ্যাকসিন গবেষণায় অক্সফোর্ডের সাম্প্রতিক ট্রায়ালের রিপোর্ট বলছে বাকিদের থেকে চার কদম এগিয়েই গেছে ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্টের টিম। প্রথম, দ্বিতীয় ট্রায়ালের গণ্ডি পার করেছিল আগেই। ব্রিটেনে তৃতীয় ও চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্টও ভালর দিকেই বলে দাবি।
শুধু তাই নয়। দেশের বাইরে ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও জোরকদমে চলছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল। এদিকে ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম পর্যায়ের ক্লিনিকাল রিপোর্টে সুফল দেখা গেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালও ভালর দিকেই। সব ঠিক থাকলে জুলাই মাসের প্রথমেই ভ্যাকসিন চলে আসতে পারে বাজারে। অক্সফোর্ডের ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন গবেষণার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছে অ্যাস্ট্রজেনেকাও। অক্সফোর্ড ও অক্সফোর্ডের অধীনস্থ জেন্নার ইউনিভার্সিটির গবেষকদের ডিজাইন করা ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে ব্রিটেনে।
উল্লেখ্য, ডিএনএ ভ্যাকসিনের প্রথম হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়েছিল এপ্রিলে। প্রথম দু’জনের শরীরে ইনজেক্ট করা হয়েছিল ভ্যাকসিন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন এক মহিলা বিজ্ঞানী। আরও ৮০০ জনকে দুটি দলে ভাগ করে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছিল। এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের দায়িত্বে ছিলেন, ভাইরোলজিস্ট সারা গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল এবং জেন্নার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। শিম্পাঞ্জির শরীর থেকে নেওয়া কম সংক্রামক অ্যাডেনোভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তৈরি এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট শরীরে গিয়ে বি-কোষ ও টি-কোষকে উদ্দীপিত করে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি করবে বলেই আশা গবেষকদের।
অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন গবেষণায় যুক্ত রয়েছে ভারতের অন্যতম বড় বায়োটেকনোলজি ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। অক্সফোর্ডের কোভিড ভ্যাকসিন গবেষণার অন্যতম সদস্য ডক্টর অ্যাড্রিয়ান হিলের তত্ত্বাবধানে সেরামেও এই ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। সিইও আদর পুনাওয়ালা বলেছিলেন, দেশেও এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ও সেফটি ট্রায়াল করা হবে, তাছাড়া অক্সফোর্ডের রিকভারি ট্রায়ালের প্রতিটি পদক্ষেপে নজর রাখা হচ্ছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরি হচ্ছে।
আদর বলেছিলেন প্রতিমাসে ৫০ লক্ষ ডোজে ভ্যাকসিন বানানো হবে। ট্রায়াল সফল হতে শুরু করলেই ফি মাসে প্রায় এক কোটি ডোজে ভ্যাকসিন বানানো শুরু হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। আবার সম্প্রতি পুণের সেরাম ইনস্টিটিউটের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর সুরেশ যাদব বলেছেন, প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য কম ডোজেই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছিল, তাতে সুফল দেখা গেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। আশা করা যায়, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পারবে সেরাম। ২০ থেকে ৩০ লক্ষ ভ্যাকসিনের ডোজ তৈরির কাজ চলছে।
সুরেশ যাদব জানিয়েছেন, অক্সফোর্ডের গবেষকদের ট্রায়াল রিপোর্ট অনুযায়ী এই ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই করোনা সংক্রমণের মোকাবিলা করতে পারবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে দেখা গিয়েছিল, ক্যানডিডেট ভ্যাকসিনের দুটি ডোজেই প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে মেনিঙ্গোকক্কাল ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামক চারটি স্ট্রেনের মোকাবিলা করার মতো প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, রেসাস প্রজাতির বাঁদরের শরীরে ভ্যাকসিনের একটি ডোজেই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ কমে গিয়েছিল।