ঘূর্ণিঝড় উম্পুনের ঘণ্টা কয়েকের তাণ্ডব প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে গিয়েছে বাংলার বিস্তীর্ণ অংশকে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে স্পেশাল ট্রেন না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল নবান্নর তরফে। কিন্তু তারপরেও রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে রাজ্যে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এ নিয়েই গতকাল ভিডিও কনফারেন্সে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘রেল মর্জিমতো কাজ করছে। গায়ের জোর দেখাচ্ছে। রাজ্যের যে তাতে বিপদ হচ্ছে তা কী বুঝতে পারছে না! এতো বড় দুর্যোগ সামলাব, মানুষের দুর্ভোগ সামলাব নাকি ওদের রাজনীতি সামলাব?’ এবার কার্যত একই সুরে কেন্দ্রের ট্রেন পাঠানোর ধরন নিয়ে আপত্তি তুলল পিনারাই বিজয়নের কেরালা সরকার। বাংলার মতো কেরালা সরকারেরও অভিযোগ, কেন্দ্রের ট্রেন পাঠানোর ধাক্কায় রাজ্যে করোনা প্রতিরোধের কাঠামো এলোমেলো হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, লকডাউনের মধ্যে অন্যান্য রাজ্যে আটকে থাকা রোগী, পড়ুয়া ও শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি উঠছিল বিভিন্ন মহল থেকেই। সরব ছিল বিরোধীরাও। আবার সরকারি কোনও ব্যবস্থা না পেয়ে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক পায়ে হেঁটে বাড়ির পথে রওনা দিচ্ছিলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় তৃণমূল সরকার শ্রমিকদের ফেরানোর জন্য রেলের সঙ্গে কথা বলে ট্রেনের ব্যবস্থা করতে শুরু করে। কিন্তু মমতা বারেবারেই বলে এসেছেন, রাজ্যকে তার নিজের পরিকাঠামো বুঝে ট্রেন নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। অথচ রেল তার ইচ্ছামতো ট্রেন পাঠাতে শুরু করে দিচ্ছে, রাজ্য তার খবর পাচ্ছে পরে। এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে।
গত কয়েক দিনে শ্রমিকদের নিয়ে ট্রেন ঢুকতে শুরু করার পরে জেলায় জেলায় সংক্রমণের মাত্রা যেভাবে বেড়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলে সরকারি মহলের বক্তব্য। এই পরিস্থিতিতে এবার কেরালার সরকারও সরাসরি প্রশ্ন তুলছে, রেল কি ‘করোনা সংক্রামকে’র দায়িত্ব নিয়েছে? মহারাষ্ট্র থেকে ট্রেন রওনা হয়ে যাওয়ার পরে তারা সেই খবর পেয়েছে, এমনই অভিযোগ কেরালার। বিষয়টি নিয়ে রেল মন্ত্রকের কাছে কড়া আপত্তিও জানিয়েছে তারা। কেরালার অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাকের বক্তব্য, ‘ভিনরাজ্য থেকে যাঁরা ফিরবেন, তাঁদের জন্য একটা পদ্ধতি রাজ্য সরকার চালু করেছে। যাঁরা ফিরতে চান, রাজ্যের পোর্টালে নাম লেখালে সরকারি প্রতিনিধি গিয়ে তাঁদের বাড়িতে দেখে আসবেন কোয়রান্টাইনের সুযোগ আছে কি না। বাড়িতে তেমন ব্যবস্থা না থাকলে সরকারি কোয়রান্টাইনে পাঠানো হবে। ট্রেন থেকে নামলে প্রাথমিক পরীক্ষা করে তার জন্য পাস দেওয়া হবে। কিন্তু রেলের হঠকারিতার জন্য এই ব্যবস্থাটাই কার্যকর করার সুযোগ হারাতে বসেছে। তা হলে করোনার সুষ্ঠু মোকাবিলা হবে কীভাবে?’