কলকাতা ও বাগডোগরা বিমানবন্দরে কেন্দ্রীয় আমলাদের দল পা রাখার পনেরো মিনিট আগে তা নবান্নকে জানানো হয়েছিল। এভাবে গাইডলাইন না মেনে, রাজ্য সরকারকে না জানিয়েই কেন্দ্র যে দল পাঠিয়েছে, ভেবেছিলেন সে কথা বলেই শুরু করবেন। লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে উগড়ে দেবেন আক্ষেপ। কিন্তু এই সামান্য কথাটুকু বলার জন্য ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হল রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে! হ্যাঁ, যেহেতু রাজ্যের নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’, শুধুমাত্র সেই কারণেই মঙ্গলবারের আলোচনায় রাজ্যের নাম এল সবার শেষে।
প্রসঙ্গত, লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা ভিডিও কনফারেন্সে সবকটি রাজ্যের বিধানসভার অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে চেয়েছিলেন কোন রাজ্য করোনা মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নিয়েছে। ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম ধরে রাজ্যগুলির ডাক পড়তে থাকে। তাতেই বাধে বিপত্তি। এ রাজ্যের ইংরেজি নাম অনুযায়ী সবার শেষে আসে বাংলার নাম। গতকাল সকাল ১১টায় কনফারেন্স শুরু হয়। একেবারে শেষ পর্বে বিকেল তিনটেয় শিকে ছেঁড়ে বাংলার। তখনই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়েরও।
মুখ খুলে প্রথমেই নিজের ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। পরে বলেন, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল নাম বলে সবার শেষে আমাদের ডাক পড়ল। সর্বদলীয় বৈঠকে আলোচনা করে রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে বাংলা করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম অনেক আগে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই হল না। লোকসভার অধ্যক্ষকে আবেদন করলাম এ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘অনেক রাজ্যের নাম পরিবর্তন হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের নামের কেন পরিবর্তন হবে না?’
বিমানের আক্ষেপের কথা সবটা শুনে পরিস্থিতি বুঝে নোট করে নেন বিড়লা। পরে রাজ্য করোনা নিয়ে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চান। টানা ১৫ মিনিট এরপর বলে যান বিমান। প্রথমেই বলেন, ‘এসব জানার জন্য ভিডিও কনফারেন্সের প্রয়োজন ছিল না। সবকিছু স্বাস্থ্যভবনের ওয়েবসাইটেই দেওয়া রয়েছে।’ শেষে রাজ্যের দাবি মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর চাওয়া ২৫ হাজার কোটি টাকার কথা তোলেন। আবেদন করেন এ নিয়ে বাংলার ন্যায্য দাবি তুলে ধরুন লোকসভার অধ্যক্ষ।
এবং একেবারে শেষ পর্বে মুখ্যমন্ত্রীকে না জানিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের রাজ্যে চলে আসার বিষয়টি তুলে ধরেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ। বলেন, ‘লোকসভার অধ্যক্ষকে জানিয়েছি বিষয়টা আমি আপনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে না জানিয়ে কেন্দ্রের দল এভাবে রাজ্যে চলে আসাটা ঠিক হয়নি।’ উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে সংসদের দুই কক্ষেও সরব হয়েছে রাজ্যের শাসক দল। লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভায় দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন কেন্দ্রের টিম পাঠানোর সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়েছেন।