যত গর্জন তত বর্ষণ নয়। প্রবাদের সত্যতা টের পাওয়া গেলো বিজেপির চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার সমাবেশে।
এলেন, মালা পরে বক্তৃতা দিলেন এবং চলে গেলেন। প্রায় আধঘণ্টার বক্তৃতায় অনেক কথা বললেন। বাংলা থেকে ২২টি লোকসভা আসন জেতানোর খোয়াব দেখালেন। তবে কীভাবে জয় আসবে, তার কোনও দিশা দেখাতে পারলেন না বিজেপি–র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। বাংলায় ক্ষমতায় আসার জন্য অবশ্য জেলায় জেলায় যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানালেন। তাঁর দলের পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সাফল্য’ নিয়ে বক্তৃতায় ব্যয় করলেন সামান্য কয়েকটি কথা। যার মধ্যে নতুন কিছু পাওয়া গেল না। তিনি ঠিক বলছেন কিনা, জানার জন্য সভায় উপস্থিত সদস্য–সমর্থকদের প্রশ্ন করছিলেন। নিছক জনসংযোগ। তবে তখন কর্মীদের অনেকেই ব্যস্ত সেল্ফি তুলতে, টুকটাক কিছু খাবার মুখে পুরতে। বা তাঁরই কাট–আউট নিয়ে ছবি তোলাতে। চুম্বকে এই হল শনিবার কলকাতার মেয়ো রোডে বিজেপি–র যুব মোর্চার সমাবেশ এবং বিজেপি সভাপতির বক্তৃতা।
যুবমোর্চা সভানেত্রী পুনম মহাজন বললেন, ‘ইয়ে তো ট্রেলার থা, পিকচার অভি বাকি হ্যায়’। দলের অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিন্হার দাবি, ‘অমিত শাহ অন, তৃণমূল গন’। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের আশ্বাস, ‘অমিত শাহের নজর রয়েছে বাংলায়’।
তবে যাঁকে ঘিরে এত চর্চা, তাঁর বক্তৃতায় ঝাঁজ কই! এদিন সভায় যা যা বলেছেন, এর আগেও রাজ্যে এসে সেই কথাই বলে গেছেন। তৃণমূল তথা রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করবেন, এটাই প্রত্যাশিত। করেছেনও। তবে নিজের দলকে চাঙ্গা করার উপায় বাতলাতে পারেননি। অথচ এই সভার আয়োজন করার জন্য দলের রাজ্য নেতারা নাওয়াখাওয়া ভুলেছিলেন। শাহ অভিযোগ করলেন,‘বাংলা চ্যানেলগুলি ডাউন করে দেওয়া হয়েছে! যাতে তাঁর সভা দেখতে না পান রাজ্যের মানুষ।’ সঙ্গে করুণ আর্জি, ‘একবার নরেন্দ্র মোদিকে সুযোগ দিন। উন্নয়ন হবেই।’
তাঁর তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক দিলীপ– রাহুল। কিন্তু তাঁরা সভার যে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন, তা শাহ ধরে রাখতে পারলেন কই! সভার প্রধান বক্তার গলায় আগের নেতাদের কথাই ফিরে এল।
শাহ বার বার বোঝাতে চাইলেন, তাঁরা ‘বাংলা বিরোধী’ নন। বললেন, ‘আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা বাংলার। আমরা বাংলা বিরোধী নই। অবশ্যই মমতা–বিরোধী এবং তৃণমূল–বিরোধী।’ সভায় দেখা গেল চেয়ার ছোড়াছুড়ি। জেলা নেতার উপস্থিতিতে বাগ্বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়া। সভা শেষে মঞ্চে উঠে নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক। ভাগ্যিস এখানে মঞ্চ ভেঙে পড়েনি!