দলের ছাত্র সংগঠনই রাজ্যে বিজেপির মোকাবিলায় যথেষ্ট। অমিত শাহদের সেটাই বুঝিয়ে দিতে চায় তৃণমূল। মেয়ো রোডে বিজেপি সভাপতির জনসভার সতেরো দিনের মাথায় একই জায়গায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা। এই সমাবেশের প্রচার পুরোপুরি টিএমসিপির উপরেই ছেড়ে দিয়েছে তৃণমূল। তাই জেলায় জেলায় প্রস্তুতি সভা করছেন ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রীরাই।
রাজ্যের সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএমসিপির একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। স্বভাবতই, সাংগঠনিক শক্তির বিচারেও শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের প্রভাব ও প্রতাপ এখন সর্বাধিক। ফলে, একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠা দিবসের আবেগ, অন্যদিকে দলনেত্রীর জনসভা- এই দ্বিমুখী গুরুত্বের প্রেক্ষাপটে দলের ছাত্র শাখাকে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই সমাবেশ আয়োজনের দায়িত্ব জেলা ও রাজ্যস্তরের টিএমসিপির প্রতিনিধিদের হাতে দিয়েছে দলীয় নেতৃত্ব। সমাবেশ কমিটির চেয়ারম্যান পার্থবাবু ও কো-চেয়ারম্যান অভিষেক নেপথ্যে থেকে ছাত্র নেতাদের পরিচালনা করবেন। সেই লক্ষ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় টিএমসিপি সভা করছে। আগামী বছরের গোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। এরাজ্যে নির্বাচনী সাফল্য পেতে বিজেপি মরিয়া। আসন্ন লোকসভা ভোটে মমতা ও তাঁর দল জাতীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। ইতিমধ্যেই জেশজুড়ে বিরোধী ঐক্য গড়তে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক কারণেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভার পিঠোপিঠি তৃণমূল নেত্রীর সমাবেশ রাজ্যের শাসকদলের কাছে বাড়তি মাত্রা এনে দিয়েছে। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলের ছাত্রদেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হবে, অভিষেক নিজে তেমনই বার্তা দিয়েছেন। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মতে, দলের পরিচলনায় এবার টিএমসিপিকে সামনে রেখে জমায়েত হবে। তিনি বলেন, বিজেপির জমায়েত করতে গোটা দল নেমেছে। সেখানে মেয়ো রোডে ২৮ আগস্ট অমিত শাহদের টেক্কা দেবে তৃণমূলের পড়ুয়াদের সমাবেশ। সূত্রের মতে, এবারের ছাত্র সমাবেশ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে। দলীয় নেতৃত্বের নির্দেশ, এবার সমস্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিট থেকে প্রতিনিধি আনতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর সভায়। অর্থাৎ দলের ভিড় দেখিয়ে পার পাওয়া যাবে না। এক নেতার মতে, সব কলেজে ছাত্র সংসদ তৃণমূলের দখলে। মুখ্যমন্ত্রী চান এই পড়ুয়ারাই একদিকে যেমন ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে সরব হবেন, তেমনই রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে প্রচারে তারাই থাকবেন সামনের সারিতে।
এবারের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাজ্যের সব জেলা থেকেই প্রতিনিধি আনতে জোর দেওয়া হয়েছে। এক প্রাক্তন ছাত্রনেতার মতে, উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিএমসিপি একমাত্র সংগঠন। দল চায় সেই সংগঠনের শক্তির প্রতিফলন ঘটুক। আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৃণমূলের জনসভা রয়েছে আগামী বছরের জানুয়ারিতে। সেই নিরিখে মমতার উপস্থিতিতে এই ছাত্র সমাবেশ রাজনৈতিক মহলের কাছেও যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।