১৯১১ সালে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আইএফএ শিল্ড জয় করে মোহনবাগান। এই খেলায় মোহনবাগানের ফুটবলাররা খালি পায়ে খেলেছিল। উল্লেখ্য, ১১জন খেলোয়াড়দের মধ্যে ৮জন ছিল বাঙাল। এদের পরে আপনি উদ্বাস্তু বা কাঁটাতারের দাগওয়ালা ও বলবেন।
১). গোলকিপার হীরালাল মুখার্জি, ফরিদপুরের।
২). রাইট ব্যাক সুধীর চ্যাটার্জি ফরিদপুরের।
৩). রাইট ব্যাক শিবদাস ভাদুড়ী রাজশাহীর।
৪). রাইট ব্যাক বিজয়দাস ভাদুড়ী রাজশাহীর।
৫). ফরোয়ার্ড অভিলাষ ঘোষ ঢাকার।
৬). রাইট উইংগার কানু রায় ঢাকার।
৭). হাফ ব্যাক রাজেন সেনগুপ্ত ঢাকার।
৮). নীলমাধব ভট্টাচার্য বরিশাল।
গোষ্ঠ পালের জন্ম ফরিদপুর, বাংলাদেশ। চুনি গোস্বামীর জন্ম কিশোরগঞ্জ বাংলাদেশ। ও হ্যাঁ, বিজেপির লালকৃষ্ণ আদবানীর জন্ম পাকিস্তানের করাচিতে।
কাঁটাতারের দাগ এই সমস্ত ইতিহাসের সাক্ষী। দুভাগ হয়ে যাওয়া মানব জমিনের সাক্ষী। ফুটবল জাত-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের কথা বলে। জিতলে পরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার গল্প শোনায়, হারলে পরে এক সপ্তাহ টানা না খেয়ে কাটিয়ে দেওয়ার কিসসা বলে।
যাদবপুর বা আজাদগড় কলোনির এঁদো গলি থেকে যুব ভারতী, ফটজল, পেপ্সি, বুড়ির চুল থেকে পাইল করা রাম, ডার্বির রোববারে ম্যাটাডর থেকে বাঁধানো খিস্তি ওই কাঁটাতারের ঐতিহ্যই বহন করে চলেছে। এক রাতে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে এক সম্পূর্ণ নতুন দেশে এসে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই, মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস ওই কাঁটাতারই হিসেব রাখে। কাঁটাতারই তো নিশ্চুপ থাকে যখন কোন বৃদ্ধ ময়দানে বসে তার এদেশীয় বন্ধুকে বলে, “অহনও রাত্রে স্বপ্ন দ্যাহি দ্যাশের বাড়ির। নদীরে তো দ্যাশে গাঙ কইত। আমরা গাঙ্গে স্নান করতে যাইতাম। ফুটবল খেইলতাম বৃষ্টিতে। কত্ত কিসু মনে পড়ে, হায় কপাল।”
আমি বিশ্বাস করতে চাই এই ছবিটা ফেক। আমি বিশ্বাস করতে চাই এটা বানানো হয়নি। মোহন বাগানের বন্ধুরা ও নিশ্চয়ই একমত হবে। এই সংস্কৃতি তারা ও চায় না নিশ্চিত। চাইলে বছরের পর বছর আমাদের শত্রুতা পৃথিবী বিখ্যাত হতো না। ইস্ট বেঙ্গল বা মোহন বাগান হওয়ার জন্য ধক লাগে সিংহের সাইজের।
শোনেন কত্তা, ৭০ বছরের পুরনো দগদগে ঘা কে চুলকাতে আসবেন না। উদ্বাস্তুরা কি পারে আর না পারে তা আরেক বাঙাল তথাগত রায়কে জিগ্যেস করবেন। আপাতত বলে রাখি, উদ্বাস্তুরা কিন্তু বাছা বাছা গাল ও পাড়তে পারে। সব বুঝবেন না। কাঁটাতারের ওপারের ভাষা তো! তাই বলি মুখ সামলাইয়া কথা কন কত্তা! বাঙাল বাচ্চাদের মাথা গরম হইলে আবার সুঁটিয়ে লাল হলুদ ও করে দিতে পারে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত
পুনশ্চঃ এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। সত্যতা যাচাই করে দেখা হয়নি। যারাই করুক অত্যন্ত নিম্নরুচির পরিচয়। রাজনৈতিক দল ও নিশ্চয়ই এটির নিন্দা করবে।