পিটিআই পড়ে জানলাম, বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় সন্দেহ করছেন যে তার বাড়িতে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ করেছে কারণ তিনি লক্ষ্য করেছেন বাড়িতে রাজমিস্ত্রীর কাজ যারা করছে তাদের অদ্ভুত খাদ্যাভ্যাস। তারা নাকি শুধু পোহা (চিঁড়ে) খায়।
বাংলাদেশীরাই স্রেফ পোহা বা চিঁড়ে খায়, কে বিজয়বর্গীয় বাবুকে এই ধারণাটা দিয়েছেন জানা নেই। সংবাদসংস্থা পিটিআই
খবর করেছে মানে ফেকনিউজ ও নয়। তবে সত্যি উনি এটা ভাবেন ও সিএএ নিয়ে এক সেমিনারে এটা বলেছেন। এবার কেন যেন গা গুলোচ্ছে। ঘেন্নাপিত্তি জড়ো হচ্ছে। এতোটা অ-জ্ঞান, এতোটা হেও বাঙালিকে, গরীব মানুষকে করেও পার পাওয়া যায়? টিকে থাকা যায় ক্ষমতায়? ভাগ্যিস নেতাজী তুমি ঘরে ফেরোনি৷
প্রথমত পোহা শব্দটাই পূর্ব ভারতের গরীব মানুষ বলেনা, বাংলাদেশে তো নয়েই। চিঁড়ে বা চিঁড়া বলা হয়৷ জলখাবার হিসেবে চিঁড়ের পোলাও, চিঁড়েভাজা, দই চিঁড়ে খাওয়া হয়। তবে গরীব মানুষের ওতো সৌখিনতা কোথায়? অনেকে চিঁড়ে ধুয়ে অল্প চিনি বা গুড় দিয়ে খেয়ে নেয়। পেট ঠান্ডা থাকে, পেট ভরে খাওয়া ও হয়। তারপর একটা কলা হয়তো৷
আপনি হয়তো জানেন না বর্গী বাবু পুঁটুলিতে চিঁড়ে আর গুড় বেঁধে সেই ভোরবেলা ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত বহু মানুষ বেরিয়ে পড়ে৷ সারাদিন ভাত না হলে ও ভাতের স্বাদ ভেজা চিঁড়েতে মিটে যায়। আপনি তাদের অনুপ্রবেশকারী বলছেন? যে মাটি কাটছে, পাথর ভাঙছে, হাতে বানানো সামান্য কিছু জিনিস মাথায় করে এনে হাটে বিক্রি করছে তারা সব্বাই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী?
ফ্রিজ খুলে কে কি মাংস রাখলো তা না দেখে কোনদিন ওই রক্ত-ঘামের গন্ধওয়ালা, মাটির গন্ধওয়ালা মানুষগুলোর ওই গামছার পুঁটলি খুলে দেখবেন ওরা কি খায় সারাদিন। ওই চিঁড়ে, গুড় আর খুব বেশী হলে একটা খৈনীর ডিবে৷ ওদের দেখে ভয় পাচ্ছেন?
আপনারা কথায় কথায় দেশ থেকে বের করে দেবো, উদ্বাস্তুদের লাথি মেরে তাড়াবো ইত্যাদি বলেন। জানেন উদ্বাস্তু শিবিরে খিচুড়ি ছাড়াও এই চিঁড়েই মেলে? সারাদিন কেন, দিনের পর দিন বন্যায় যাদের ঘর ভেসে গেছে, তারা এক বাটি চিঁড়েই তৃপ্তি করে খায়। ভগবানে বিশ্বাস করেন তো আপনি৷ গরীব, বিপন্ন মানুষের অভিশাপে ও বিশ্বাসী হন।
আপনার চিন্তাভাবনার ভারতবর্ষের চেয়ে অনেক বৃহৎ, অনেক বৈচিত্র্যময় এই ভারতবর্ষ। যাদের দুবেলা খাবার জোটেনা কিন্তু আধপেটা খেয়ে আপনাদের থেকে ধর্মের হিতপদেশ জোটে, তাদের এক বস্তা চিঁড়ে উপহার দিয়ে দেখুন তাদের মুখের চওড়া হাসি। নতুন মন্দির মসজিদ বানালেও এই হাসি, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ দেখবেন না।
বাঙালিদের শিক্ষা- দীক্ষা – শিল্প- সংস্কৃতি – খাদ্যাভ্যাসকে অপমানের পর অপমান করছেন। করুন। বাঙালি সহিষ্ণু জাত। শীত ঘুমে থাকে। যতক্ষণ না ঘুম ভেঙে ইলিশ মাছের কাঁটার মতো চিবিয়ে চুষে চাড্ডি খাচ্ছে, অপমান করে যান। হিসেব রাখা হচ্ছে। কিন্তু এবার তো আপনি বিহারি আর মারাঠিদের ও অপমান করে দিলেন কত্তা। মুম্বাইয়ে লাখ লাখ মানুষ সারাদিন ওই ভাজা পোহা হলুদ বাদাম কারি পাতা দেওয়া – ওই খেয়েই স্ট্রাগলটা করে। দহি-চিউঁড়া বিহারের সবচেয়ে প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে একটি। দই-কলা-মধু দিয়ে চিঁড়ে মাখা। দিল্লির তাঁবড় আইএএস হোক, নীতিশ- পাসওয়ান- লালু প্রসাদ হোক বা বড়বাজারের মুটে বা বিহারি ফুচকাওয়ালা – এক প্লেট রাখুন জাস্ট সামনে। তারপর বলুন দেখি, দহি চিউঁড়া খাচ্ছে শুধু ওরা – বোধহয় বাংলাদেশী।
আপনি মশাই বাঙালিবিদ্বেষীই শুধু না, গরীব বিদ্বেষী ও বটে দেখছি। আপনার খাদ্যাভ্যাস, আপনার সংস্কৃতি, আপনার ধ্যানধারণার বাইরে যাকিছু তাই অনুপ্রবেশকারী নয়। পৃথিবীর সব দেশ অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে চায় কিন্তু কেউ খাদ্যাভ্যাস দেখে চিহ্নিত করেনা. ফেজটুপি দেখে বিভেদ করেনা নাগরিকে নাগরিকে।
এরপর ও রাজনৈতিক চিঁড়ে ভিজবে বাংলায়? পরের বার কলকাতা আসুন। মিষ্টিদই-কলা-চিঁড়ে, কাঠ কয়লায় ভাজা চিঁড়ে বাদাম, মায়ের হাতের চিঁড়ের পোলাও সব খাওয়াবো। ও হ্যাঁ, চিঁড়ার বিরিয়ানি বাংলাদেশে দারুণ একটা খাবার। শীতকালে হেব্বি লাগে৷ খাওয়াবো। খেয়ে পেট ছেড়ে দিলে নো চাপ, টক দই- চিঁড়ে ভেজানো জল ও খাওয়াবো। সুস্থতা কামনা করবো।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত