গোটা বিশ্বের ১৬৫ টি স্বাধীন দেশ ও দু’টি অঞ্চলে গণতন্ত্রের হাল-হকিকৎ নিয়ে সমীক্ষায় প্রতিটি দেশের র্যাঙ্কিং হয় প্রত্যেক বছরই। আর এবছর সেই তালিকায় ১০ ধাপ নেমে গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর ভারত। এখন তার অবস্থান ৫১ নম্বরে। ২০১৯ সালে ভারতে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয়েছে যে দু’টি বিষয় নিয়ে, সেই ৩৭০ ধারা ও এনআরসি-র কথাও উল্লেখ করা হয়েছে এই ইনডেক্সে। বলা হয়েছে, ভারত সরকারের ওই দু’টি পদক্ষেপের ফলে সেদেশে গণতন্ত্রের পরিসর সংকুচিত হয়েছে।
ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্স তৈরির সময় যে বিষয়গুলি বিবেচনা করা হয়েছিল, তার মধ্যে ভোটপ্রক্রিয়া, বহুত্ববাদ, সরকারের কাজের পদ্ধতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নাগরিক অধিকার থাকে। এর ওপরে ভিত্তি করেই প্রতিটি দেশকে ০ থেকে ১০ এর মধ্যে একটি নম্বর দেওয়া হয়েছে। ভারত ২০১৮ সালে পেয়েছিল ৭.২৩। ২০১৯ সালে পেয়েছে ৬.৯০। এশিয়া ও অস্ট্রেলীয় অঞ্চলে ভারত রয়েছে আট নম্বরে। তিমোরলেস্তে, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানের মতো দেশও আছে তার আগে।
সেই তালিকায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে অনেক উথাল পাথাল হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে তাইল্যান্ডে। ২০১৮ সালে তার স্কোর ছিল ১.৬৯। ২০১৯ সালে হয়েছে ৬.৩২। গণতান্ত্রিক দেশগুলির তালিকায় সে উঠে এসেছে ৩৮ ধাপ। সিঙ্গাপুরে গত বছর ‘ফেক নিউজ’-এর বিরুদ্ধে আইন হয়েছে। এর ফলে তালিকায় নেমে গিয়েছে সেই দেশ।
ভারত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সেদেশে সংবিধানের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে স্বশাসন দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকার কাশ্মীরের সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’ এখানে ৩৭০ ধারা ও ৩৫ এ ধারা লোপ করার কথা বলা হয়েছে। ডেমোক্র্যাসি ইনডেক্সের বক্তব্য, সংবিধানের ওই দু’টি ধারা লোপ করার পাশাপাশি ভারতের সংসদে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন পাশ করানো হয়েছে। এর ফলে জম্মু-কাশ্মীর এখন আর রাজ্য নেই। তা দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছে।
এদিকে এনআরসি-র প্রসঙ্গ তুলে সেই ইনডেক্সে বলা হয়েছে, ‘আসামে ১৯ লক্ষ মানুষকে নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বাদ গিয়েছেন, তাঁদের এক বড় অংশ মুসলিম। শাসক বিজেপির দাবি, তাঁরা বাংলাদেশী। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সেকথা অস্বীকার করেছে।’ এছাড়াও জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকে ঘিরে দেশ জোড়া সমালোচনার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘অনেকে বলছেন, নতুন আইনে মুসলিম জনতাকে টার্গেট করা হয়েছে। এইভাবে ধর্মের ভিত্তিতে জনসংখ্যায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা হচ্ছে।’