ওই যে অজস্র সহস্র মাথা দেখছেন ডানদিকে যে বাড়িটার পাশ দিয়ে এগিয়ে চলেছে, ওটা জরাজীর্ণ ফুতনানি চেম্বার। ফুতনানি, মেঘনানি, মোতওয়ানি, কেসওয়ানি বা আদবানী – পদবির শেষে নানি বা নি আছে মানেই বুঝবেন সে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের লোক। ঘর-বাড়ি ছেড়ে একরাতে চলে এসেছিল। গোটা পৃথিবীটা দেশ এদের। আপনারা বলেন উদ্বাস্তু।
এই ফুতনানি চেম্বার ও এক সিন্ধী ভদ্রলোকের। এককালে এখানেই বাটা জুতোর মূখ্য দপ্তর ছিল। বাটা মানে পায়ে থাকলে ও যে জুতো আপামর ভারতবাসীকে একসুতোয় বেঁধে দিতো। পাঞ্জাবী, সিন্ধী, গুজরাটি, মারাঠি লোকের সমাগম ছিল এর ফুটপাতে৷ গোটা ভারতের নয়নের মনি হলেও আদপে বাটা কিন্তু সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি। টমাস বাটার নামে।
![জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ 2 79445815 2904511039605416 8140446314350510080 o](https://ekhonkhobor.com/wp-content/uploads/2019/12/79445815_2904511039605416_8140446314350510080_o-1024x682.jpg)
ফুতনানি চেম্বার বহু প্রাচীন একটি বাড়ি। শোনা যায় ‘হিন্দু’ রানী রাসমণির পরিবারের সদস্য এর মালিক ছিল। পরে হাতবদল হয়। রানী রাসমণি মানে যে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠাত্রী এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতমা পৃষ্ঠপোষক।
এরকম একটি বাড়িতে ভারাটে হয়ে বহু সময়ে বহু পরিবার এসেছিল। যেমন হিন্দু ডা: নিশিকান্ত বসু ও হেমলতা বসু পরিবার তার তিন সন্তান নিয়ে বা আমিনিয়া হোটেলের মুসলিম মালিক বা হোটেল রৌনক! আমিনিয়া আর রৌনক এ হিন্দু মুসলমান একসাথে খায় কিমা-কোরমা! ও হ্যাঁ জানানো হয়নি, ওই হিন্দু পরিবার যারা ভাড়া থাকতো, সেই ডা: নিশিকান্ত বসু ও হেমলতা বসুর ছোট ছেলে জ্যোতিন্দ্র বা বিশ্বের কাছে জ্যোতি বসু পরে বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হন। উনি বিজেপিকে অসভ্য ও বর্বরদের দল বলেছিলেন। সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, আপনার বাংলায় দাঙ্গা ক্যাচাল হয়না কেন, উনি গম্ভীর ভাবে বলেছিলেন, সরকার দাঙ্গা চায়না বলে দাঙ্গা হয়না। ও আর উনি আল্লাহ বা রামকে বিশেষ সমীহ করতেন না বলে শুনেছি। আর কোনদিন নামাবলী বা ফেজটুপি ও পরে ঘুরতে হয়নি।
ফুতনানি চেম্বারের ঠিক বাঁদিকে ওই লাল বাড়িটা ব্রিটিশরা বানিয়েছিল। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের বিল্ডিং। চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু, ফজলুল হক থেকে ফিরহাদ হাকিম, বহু মানুষের সমাগম হয়েছে ওই পথে। কআর ইতিহাসটা একটা বিল বানিয়ে বাদ দেবেন?
এই যে হিন্দু, মুসলমান, জৈন, খ্রিষ্টান, সিন্ধী, পার্সি এর পুরোটা নিয়ে ওই রাজপথ। ওই মানুষগুলো। ওই যে দূরের বাড়ি বা চেনা গলি, ঘুপচি দোকান। সবটা সবার জন্য বছরের পর বছর ধরে। একদিন হঠাৎ ঠিক করলেন একে বাদ দিয়ে ওকে রাখবেন, তাকে নিয়ে আসবেন, অমুককে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাবেন, ওর ফ্রিজ খুলে কি মাংস খাচ্ছে দেখবেন, মামদোবাজি নাকি?
ওই রানী রাসমণি থেকে ফুতনানি, রামকৃষ্ণ পরমহংস থেকে দু পা হাঁটলেই পুরনো টিপু সুলতান মসজিদ, ওই চিত্তরঞ্জন দাশ, ওই কেএমসি বিল্ডিংয়ের কেরানি, সবটা মিলে আমরা। সবটা মিলে যেটা তার নাম ধর্মতলা! আপনি যতবার ধর্ম নিয়ে খেলতে আসবেন, আমরা ততোবার জাতীয় পতাকা নিয়ে, হিন্দু বৌদ্ধ শিখ জৈন পারসিক মুসলমান খ্রিষ্টানি পথে নামবো। ভারতের জন্য। কোন নেতা, সন্ত্রী, মোসাহেব বা মাতব্বরের বাবার ভারতবর্ষ না। এই পূন্যভূমি জনগণের। সেই জনগণ-ঐক্য-বিধায়ক জয় হে। জয় হে। জয় হে।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত