নয়াদিল্লি : বিচারবিভাগ বা সংসদ, কোনওটাই নয়। ভারতীয় গণতন্ত্রে(Indian Democracy)সংবিধানই যে সর্বোচ্চ, স্পষ্টতই তা মনে করিয়ে দিল দেশের শীর্ষ আদালত। বিচারবিভাগকে ‘সুপার পার্লামেন্ট’ বলে কটাক্ষ, প্রশাসনিক কাজে বিচারবিভাগের হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে অব্যাহত বিতর্ক। আদালত এবং ভারতের প্রধান বিচারপতির সমালোচনামূলক মন্তব্যের জন্য সুপ্রিম কোর্টের তিরস্কারের মুখে পড়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর মন্তব্য ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’, ‘হাস্যকর’ এবং ‘অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে শীর্ষ আদালত। এবার তারা সাফ জানাল, ভারতীয় গণতন্ত্রে সবকিছুর উপরে সংবিধান।
Read More: ভারত-পাক সংঘাতের আবহে বাড়তি সতর্কতা কলকাতা বিমানবন্দরে, বাড়ল নিরাপত্তা
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল দীর্ঘদিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে রাজ্যপাল এবং রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে। এই সংক্রান্ত মামলায় বিল পাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালকে সম্প্রতি সময় বেঁধে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আর তা থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকর এই মর্মে অভিযোগ তোলেন, বিচারবিভাগ ‘সুপার পার্লামেন্টে’র মতো আচরণ করতে শুরু করেছে! এমনকী সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাতেও সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে অ্যাক্টের নানা সংস্থানের উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ধনকর। তাঁর দাবি ছিল “সংসদই সর্বোচ্চ। সংবিধান পার্লামেন্টের উপর কাউকে কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দেয়নি।”
পাশাপাশি, ওয়াকফ আইনে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে অভিযোগ করেছিলেন, ভারতে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধের জন্য দায়ী প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। দুবের এই মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেই দায়ের হয়েছিল একটি জনস্বার্থ মামলা। সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চের বক্তব্য, “গণতন্ত্রে(Indian Democracy)আইনসভা, প্রশাসন এবং বিচারবিভাগ আলাদা আলাদা তিনটি শাখা। এই তিনটি শাখাই সাংবিধানিক পরিকাঠামোর মধ্যে কাজ করে। সব কিছুর উপরে সংবিধান। সংবিধানই এই তিনটি শাখার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিচারবিভাগকে পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা সংবিধানই দিয়েছে। আইনের সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখার অধিকারও বিচারবিভাগকে দিয়েছে সংবিধান, সেখানে বিচারবিভাগীয় ব্যাখ্যার সুযোগও রয়েছে।”
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1921215277250863388?s=19
সুপ্রিম কোর্টের কথায়, “সাংবিধানিক আদালত বিচারবিভাগীয় পুনর্বিবেচনার কাজ করলে সেটা সংবিধানের আওতায় থেকেই করা হয়।” দুবের মন্তব্যকে বিঁধে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, “এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বকে কলঙ্কিত এবং হ্রাস করার প্রবণতা রাখে, এবং বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ এবং বাধা দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করবে। আমাদের বিশ্বাস, জনসাধারণ গণতন্ত্রের এই তিনটি শাখার পৃথক পৃথক কাজ ও ভূমিকার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। বিচারবিভাগের কী কাজ, সেটাও জনসাধারণ জানেন। তাঁরা বোঝেন, গণতন্ত্রের অন্যান্য শাখার কাজের মূল্যায়ন এবং সেই সব শাখা সংবিধান মেনে কাজ করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার অধিকার রয়েছে বিচারবিভাগের।”