নয়াদিল্লি : মঙ্গলবার তীব্র বিতর্কের মাঝেই সংসদে পেশ হল ওয়াকফ সংশোধনী বিল।(Waqf Amendment Bill) ইতিমধ্যেই এ নিয়ে শোরগোল উঠেছে দেশজুড়ে। প্রবল বিরোধিতায় সরব হয়েছে তৃণমূল-সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। এই বিল নিয়ে এত বিতর্ক কেন? কেন বিরোধিতায করছে বিরোধী শিবির? জেনে নেওয়া যাক বিশদে।
Read More: বুধেই পাল্টা শুল্কের ঘোষণা ট্রাম্পের, কতটা প্রভাব পড়বে ভারতে!
ধর্মপ্রচার এবং সমাজের উন্নতিকল্পে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যে সম্পত্তি দান করে থাকেন,
তাকেই ওয়াকফ বলে।(Waqf Amendment Bill) এই ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না, বা ব্যবসায়ীক স্বার্থে ব্যবহার করা যায় না। ওয়াকফ আসলে ঈশ্বরের সম্পত্তি, এমনটাই মনে করেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা।
বিগত সুলতানি আমল থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য পৃথক বোর্ড বা কমিটি গড়ার ধারণা ভারতে শুরু হয়। অর্থাৎ, দ্বাদশ শতাব্দী থেকেই ওয়াকফ বোর্ডের ধারণা তৈরি হয়েছে। এই বোর্ডের মূল কাজ ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা। স্বাধীন ভারতে ১৯৫৪ সালে পাশ হয় ওয়াকফ আইন। ১৯৯৫ সালে ওয়াকফ আইন সংশোধন করে, ওয়াকফ বোর্ডকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালেও একবার ওয়াকফ আইন সংশোধন করা হয়েছে।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1907412772213674075?s=19
এই মুহূর্তে ওয়াকফ বোর্ডের সারা দেশে ৮.৭ লক্ষেরও বেশি সম্পত্তি ৯.৪ লক্ষ একর জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। বর্তমান ওয়াকফ বিলের ৪০ নম্বর ধারা আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের দখল করা সম্পত্তি বা জমিতে কোনরকম সরকারি পর্যালোচনা বা রিভিউ করা যায় না। পর্যালোচনা ছাড়াই ওয়াকফ বোর্ড জমি দখল করতে পারে। কোনও সম্পত্তি নিয়ে ব্যক্তিগত মালিকানা এবং ওয়াকফ বোর্ডের আইনি বিবাদ চললেও তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার। সরকার এই আইনেই মূলত ওয়াকফ অধিকার খর্ব করতে চাইছে। বিতর্কিত কোনও সম্পত্তির মালিকানা আদতে কার, তাও খতিয়ে দেখার আইনি এক্তিয়ার সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। আরও একাধিক ক্ষেত্রে ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র অধিকার খর্ব করা হতে পারে। নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের সেই একচ্ছত্র অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হবে জেলাশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনও আধিকারিকের হাতে।
পাশাপাশি আপত্তির সূত্রপাত হয়েছে নতুন বিলে ওয়াকফ বোর্ডে দুই অ-মুসলিম সদস্যের অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নিয়েও। এছাড়া একটি কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির নথিভুক্তিকরণ নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাব রয়েছে। পুরনো আইন অনুযায়ী কোনও সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি ঘোষণা করলে, চিরদিনের জন্য সেটি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবেই থেকে যেত। নতুন বিল পাশ হলে এবার তাকেও চ্যালেঞ্জ করা যাবে। ফলত যে সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের বলে ঘোষণা করে, তাতে ইসলামিক ধর্মস্থান বা অন্য কোনও ইসলামিক প্রার্থনাস্থল তৈরি হলেও সেটাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে দাবি করা সম্ভব হবে।
এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, বর্তমানে যে আইন রয়েছে, তাতে ওয়াকফের দখল করা জমি বা সম্পত্তিতে কোনও ভাবেই পর্যালোচনা করার সুযোগ থাকে না। কারও আপত্তি সত্ত্বেও জমি বা সম্পত্তি দখল করতে পারে ওয়াকফ বোর্ড। বিজেপির দাবি, ওয়াকফ সম্পত্তির সমস্ত সুবিধা ভোগ করছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মুসলিমরা। নতুন আইন কার্যকর হলে সাধারণ মুসলিমরা উপকৃত হবেন। তাছাড়া, সাচার কমিটির রিপোর্টেও বলা হয়েছিল ওয়াকফ নিয়মের সংস্কারের প্রয়োজন। তবে সংখ্যালঘুদের একাংশের ধারণা, এই বিল পাশ হয়ে গেলে ইসলামিক সম্পত্তি সরকার হস্তগত করবে সরকার। বিরোধীদের যুক্তি, এই বিল ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের চরিত্রে আঘাত হানছে। বিশেষ করে ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিমদের প্রবেশ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিরোধী শিবির। একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে টার্গেট করার জন্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই বিল আনতে মরিয়া মোদী সরকার, এমনটাই মত বিরোধীদের।