কলকাতা : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রামী ও রক্তক্ষয়ী রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে মাটির গন্ধ, কৃষিজমির গন্ধ। নন্দীগ্রামের ইতিহাস বাংলার রাজনীতির মানচিত্রে এক জ্বলন্ত অধ্যায়। ২০০৭-এর ১৪ মার্চ কৃষিজমি রক্ষা আন্দোলনে হার্মাদ-বাহিনীর হামলায় নন্দীগ্রাম ঝরে গিয়েছিল একাধিক তরতাজা প্রাণ। কৃষকদের(Farmers )পাশে দাঁড়িয়ে, তাঁদেরই একজন হয়ে অক্লান্ত প্রতিবাদে নিবিষ্ট ছিলেন মমতা। প্রতি বছর ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম দিবস কৃষক দিবস হিসেবেও পালিত হয়। শুক্রবার এই বিশেষ দিনে বাংলার কৃষক ভাই-বোন ও তাদের পরিবারকে শুভেচ্ছা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, কৃষির সার্বিক উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলার মা-মাটি-মানুষের সরকার।
Read More: ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প নিয়ে মমতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সোনম ওয়াংচুক
পাশাপাশি, কৃষকদের(Farmers )উন্নয়নের পরিসংখ্যান ও খতিয়ান তুলে ধরলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “আমাদের কৃষকরা সারাবছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেন। আমি তাঁদের পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানাই। তাঁরাই আমাদের গর্ব। তাই আমাদের সীমিত ক্ষমতায় যতটা করা সম্ভব আমরা বাংলার কৃষক ভাই-বোনেদের জন্য করার চেষ্টা করি।”
এছাড়া সমাজমাধ্যমে তিনি জানান, “কৃষকবন্ধু (নতুন) প্রকল্পে আমরা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দ্বিগুণ করে বছরে ১০,০০০ টাকা দেওয়া হয়। যাদের এক একর বা তার বেশি জমি রয়েছে তাঁরা এই টাকা পান। এক একরের কম জমি রয়েছে যাদের, তাঁরা পান ৪,০০০ টাকা।” ২০১৯ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৪০৮৪ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের দুই কিস্তিতে, খরিফ আর রবি মরশুমে সরাসরি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা। এর ফলে মোট এক কোটি আট লক্ষেরও বেশি নথিভুক্ত ভাগচাষী-সহ কৃষক উপকৃত হয়েছেন।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1900815789357494762?s=19
মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, কর্মরত কৃষকদের মৃত্যুতে মৃত্যুজনিত সহায়তাও দেয় মা-মাটি-মানুষের সরকার। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কৃষকের মৃত্যুতে এককালীন ২ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৫ হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবারকে ২৭০৭ কোটি টাকা মৃত্যুকালীন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচ লক্ষের বেশি আধুনিক কৃষিযন্ত্র প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভর্তুকি সহায়তার পরিমাণ ১০২৭ কোটি টাকার বেশি। কৃষকদের বিপর্যয়ে রক্ষাকবচ হিসেবে বাংলা শস্যবিমা যোজনা চালু করেছে রাজ্য। প্রিমিয়ামের পুরো খরচ রাজ্য সরকার দেয়, চাষীদের যে-কোনও ফসলের বিমা বাবদ কিছুই দিতে হয় না। আলু ও আখ চাষীদেরও দিতে হয় না কোনও প্রিমিয়াম।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৯ সাল থেকে সম্পূর্ণ নিজের অর্থে ‘বাংলা শস্যবিমা প্রকল্প’ চালু করেছে রাজ্য। ১১২ লক্ষ কৃষক ৩৫৬৪ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। সরকারি সাহায্যে ২২৭৮টি কৃষিযন্ত্রাদি ভাড়া কেন্দ্র রাজ্যের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে এবং গ্রামের যুবকদের স্ব-উপার্জনের সুযোগ তৈরি করেছে। তাছাড়া ফসলের অভাবী বিক্রি রোধে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল সংগ্রহের জন্য ক্রয়কেন্দ্রে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে অন্যান্য ফসলের ন্যায্য মূল্যে ক্রয়ের বন্দোবস্তও।