কেটে গিয়েছে দীর্ঘদিন। বিজেপিশাসিত মণিপুরে এখনও নেভেনি জাতিহিংসার আগুন। মেলেনি কোনও সুরাহার ইঙ্গিত। উত্তর-পূর্বের এই ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বিরুদ্ধে বারবার উঠেছে গোষ্ঠীহিংসায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ। চাঞ্চল্যও ছড়ায় একটি অডিও টেপ নিয়ে। যদিও ওই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ‘এখন খবর’। কুকিদের দাবি, ওই টেপে বীরেনের নিজমুখে স্বীকারোক্তি রয়েছে। এবার সেই অডিয়ো টেপ নিয়েই বড় পদক্ষেপ নিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, উক্ত টেপটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিতে হবে সরকারি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)-কে। সোমবার বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমার এবং প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চে ওই মামলার শুনানি হয়েছে।
এদিন শুনানির শুরুতেই বিচারপতি কুমার বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের নিমন্ত্রণে তাঁর বাড়িতে নৈশভোজে যোগ দিয়েছিলাম। আমি কি শুনানি থেকে সরে দাঁড়াব?’’ মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হওয়া নিয়ে তাঁর আপত্তি নেই। শুনানি শুরু হতেই প্রশান্ত দাবি করেন, বেসরকারি সংস্থা ‘ট্রুথ ল্যাব্স’-এর করা ফরেন্সিক পরীক্ষায় ওই অডিয়ো টেপের কণ্ঠের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের কণ্ঠস্বরের শতকরা ৯৩ ভাগ মিল পাওয়া গিয়েছে। এর পরেই অডিয়ো টেপটি সরকারি পরীক্ষাগার সিএফএসএল-র হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। অডিয়োটির পুনরায় ফরেন্সিক পরীক্ষা করে তাদের দ্রুত রিপোর্ট জমা দিতে হবে শীর্ষ আদালতের কাছে।
গত বছর খোদ মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে সেই ‘স্বীকারোক্তি’র অডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছিল। এই বিষয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কুকিদের একটি গোষ্ঠী। এর আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে ওই মামলার শুনানিও হয়েছে। সেখানে কুকিদের তরফে আইনজীবী প্রশান্ত দাবি করেন, ওই টেপে বীরেনের টেলি-কথোপকথন রেকর্ড করেছিলেন জনৈক ‘হুইসলব্লোয়ার’। মুখ্যমন্ত্রী নাকি তাতে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি সংঘর্ষে ইন্ধন দিয়েছেন। পাশাপাশি, যারা অস্ত্র লুট করেছিল তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এই দাবির সপক্ষে কুকি সংগঠনটিকে অডিয়ো টেপ-সহ উপযুক্ত প্রমাণ জমা দিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। মাঝে কিছু দিন বিরতির পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একাধিক বাড়িঘর। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে মণিপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে। মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি রাজ্যের বেশ কয়েক জন বিধায়কের বাড়িতে হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। রাজ্যের পাঁচ জেলায় জারি করা হয় কার্ফু। ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ডিসেম্বরেও মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের বাড়ির অদূরে বোমা পাওয়া যায়! যা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজনীতির আঙিনা। অথচ এমন পরিস্থিতি নিয়ে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই কেন্দ্রের। উচ্চবাচ্য করতে শোনা যায়নি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। এমন আবহে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ নতুন করে চাপে ফেলল শাসকদল বিজেপিকে।