এককথায় ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’। যে বাংলায় শুরু হয়েছিল তাঁর ক্রিকেটজীবন, সেই মাটিতেই বাইশ গজকে বিদায় জানালেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ঋদ্ধিমান সাহা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও ঘরোয়া ক্রিকেটে থেকে অবসর ঘোষণা করলেন ‘পাপালি’। ইডেনে রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে ইনিংস ও ১৩ রানে বাংলা হারাল পঞ্জাবকে। জিতে সতীর্থদের কাঁধে চেপে মাঠ ছাড়লেন ঋদ্ধি। বৃহস্পতিবার ম্যাচ শেষে তাঁকে কাঁধে তুলে নেন সতীর্থ অভিষেক পোড়েল ও প্রদীপ্ত প্রামাণিক। বাকি ক্রিকেটারেরা তাঁকে ঘিরে হাততালি দেন। শেষে সকলে মিলে ছবিও তোলেন। ক্রিকেট-কেরিয়ারে ইতি টেনে এবার নতুন ইনিংস শুরু করতে চান ঋদ্ধি। বেশি সময় দিতে চান পরিবারকে। হাসিমুখে জানালেন, “সত্যিই অনেকটা পথ পেরোলাম। প্রত্যেকটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। যে দলের হয়ে খেলেছি নিজের সেরাটা দিয়েছি। অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমার এই যাত্রাপথে যারা পাশে থেকেছে প্রত্যেককে ধন্যবাদ। এবার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর পালা।” ঋদ্ধির দায়বদ্ধতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বাংলার কোচ তথা ঋদ্ধির একদা সতীর্থ লক্ষ্মীরতন শুক্লা। তিনি জানিয়েছেন, “ঋদ্ধি সমসময় দলের জন্য খেলেছে। তরুণদের সাহায্য করেছে। সবচেয়ে ভাল বিষয় হল, দেশের হয়ে খেলার মাঝেও ঋদ্ধি সময় বার করে বাংলার হয়ে খেলেছে। ওর দায়বদ্ধতা দেখে বাকিদের শেখা উচিত। কেরিয়ারের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ও একই রকম থেকে গেল। ভবিষ্যতের জন্য ওকে শুভেচ্ছা।” ঋদ্ধির সঙ্গে তাঁর কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণা উঠে এল বাংলার অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদারের কথাতেও। দীর্ঘদিন ঋদ্ধির সঙ্গে খেলেছেন তিনি। “জুনিয়র ও সিনিয়র স্তরে আমরা একসঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। ভাল ব্যাটার হওয়ার পাশাপাশি উইকেটের পিছনেও ঋদ্ধি দুর্দান্ত। অসাধারণ সব ক্যাচ ধরেছে। ওর সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে”, বলেন অনুষ্টুপ।
১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর শিলিগুড়ির শক্তিগড়ে ঋদ্ধির জন্ম। নিজের মহল্লায় ‘পাপালি’ নামেই পরিচিত তিনি। ২০০৬/০৭ রঞ্জি মরসুমে বাংলার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। দীর্ঘ ১৮ বছরের কেরিয়ারে ১২২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ঋদ্ধি। করেছেন ৬৪২৩ রান। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ২০৩। প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩১৩টি ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। করেছেন ৩৭টি স্টাম্পড্। দীর্ঘদিন বাংলার রঞ্জি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্রুততম শতরানের রেকর্ড রয়েছে ঋদ্ধির। পি সেন ট্রফিতে মাত্র ২০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এক কর্তার সঙ্গে বিবাদের জেরে ২০২২ সালে বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরা চলে যান ঋদ্ধি। দু’টি মরসুম সেখানে খেলার পরে আবার বাংলায় ফিরে আসেন। বাংলার হয়ে ভাল খেলায় জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছেন ঋদ্ধিমান। যদিও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ও দীনেশ কার্তিকের সমসাময়িক হওয়ায় প্রচারের আলো থেকে অনেকটাই দূরে রয়ে গিয়েছিলেন। ভারতের হয়ে খেলেছেন ৪০টি টেস্ট ও ৯টি এক দিনের ম্যাচ। টেস্টে ১৩৫৩ ও এক দিনের ক্রিকেটে ৪১ রান করেছেন তিনি। টেস্টে ৯২টি ক্যাচ ধরেছেন ঋদ্ধি। করেছেন ১২টি স্টাম্পড্। এক দিনের ক্রিকেটে ধরেছেন ১৭টি ক্যাচ। একটি স্টাম্পড্ করেছেন। লাল বলের ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক স্তরে তিনটি শতরান ও ছ’টি অর্ধশতরান রয়েছে তাঁর। উইকেটের পিছনে অসামান্য রিফ্লেক্সের জন্য ঋদ্ধিকে ‘সুপারম্যান’ আখ্যা দিয়েছিলেন ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞরা। ২০২১ সালের পর থেকে আর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি তিনি। আইপিএলে ঋদ্ধি খেলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স, চেন্নাই সুপার কিংস, কিংস ইলেভেন পঞ্জাব, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, গুজরাত টাইটান্সের হয়ে। ২০১৪ সালের আইপিএল ফাইনালে পঞ্জাবের হয়ে কলকাতার বিরুদ্ধে তাঁর চোখধাঁধানো শতরানের স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। বৃহস্পতিবার বাংলার হয়ে শেষবার মাঠে নামার আগে ঋদ্ধিকে বিশেষ সংবর্ধনা দেয় সিএবি। তাঁর হাতে বাংলা দলের সই করা জার্সি, শাল এবং ফুলের স্তবক তুলে দেন সিএবির সভাপতি স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। উপস্থিতি ছিলেন বাংলা দলের ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফরাও।
