Bangladesh Prime Minister অবশেষে জয়ের আলো দেখল ওপার বাংলার রক্তক্ষয়ী গণআন্দোলন। আজ, সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে দেশ ছাড়লেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বোন শেখ রেহানা। স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটেয় নিজের বাসভবন থেকে সামরিক বিমানে রওনা হন হাসিনা। বিমানে দিল্লী যাচ্ছেন তিনি, এমনই অনুমান একাধিক মহলের। অভ্যুত্থানের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের গণভবন চলে গিয়েছে জনগণের দখলে। সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ, কেউই তাদের বাধা দেয়নি বলে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশে সেনার অধীনে অন্তর্বর্তী তদারকি সরকার গঠিত হচ্ছে। একটি সূত্রের দাবি, তার আগে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় ইস্তফা দেওয়ার জন্য। ৪৫ মিনিট সময় তাঁকে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। তবে অন্য একাধিক সূত্রের দাবি, পুরো বিষয়টিই হয়েছে সেনাবাহিনী এবং দিল্লীর সঙ্গে আলোচনার সাপেক্ষে। তার পরেই ইস্তফা দিয়েছেন হাসিনা। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। হাসিনা বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করার পর তাঁর ভাষণ শুরু হয়। বাংলাদেশ সংসদের স্পিকারকে আপাতত ক্ষমতা হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে খবর। তার পরে তদারকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে বাংলাদেশে তদারকি সরকার গঠিত হবে। বছর খানেক পরে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে। তবে এ সব এখন খুব প্রাথমিক স্তরের বক্তব্য বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি ছিল, হাসিনা সরকারের পদত্যাগ। রবিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি ক্রমে জটিলতর হচ্ছিল। সোমবার হাসিনা পদত্যাগ করলেন। রবিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে অশান্তি ঠেকাতে কার্ফু জারি করা হয়েছিল। সোমবার থেকে তিন দিন ছুটিও ঘোষণা করে সরকার। তবে সোমবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় কার্ফু উপেক্ষা করে ভিড় বাড়তে থাকে মানুষের। আন্দোলনকারীদের জমায়েতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসও ছোড়া হয়। কিন্তু আন্দোলন দমানো যায়নি। পরে শোনা যায়, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেনাপ্রধান।
তার পরেই হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রকাশ্যে আসে। বাংলাদেশ গণমাধ্যম সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মাঝেই বাংলাদেশের রাস্তায় নেমে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। লাখো লাখো মানুষ ঢুকে পড়েছেন হাসিনার বাসভবন ‘গণভবন’-এ। আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থায় আপত্তি তুলে রাস্তায় নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ডাকে সে সময় নয় দফা দাবি তোলা হয়েছিল। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা সংস্কারের নির্দেশ দেয়। তার পর ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এক দফা দাবিতে আন্দোলন জারি রেখেছিল। দাবি ছিল হাসিনার পদত্যাগ। রবিবার সেই আন্দোলনে হিংসা ছড়ায়। শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আপাতত মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সোমবার পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এরপর শেষমেশ পদত্যাগের পথই বেছে নিতে হল হাসিনাকে। বছরদুয়েক আগে শ্রীলঙ্কার তৎকালীন শাসক রাজাপক্ষে পরিবারকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের কারণে। এবার বাংলাদেশও সাক্ষী রইল সেই ঘটনার। হাসিনা তথা আওয়ামী লিগের জন্য ‘কালো দিন’ হয়ে রইল ৫ আগস্ট। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের জনক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি একাধারে শেখ হাসিনার পিতা এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর ডাকেই পূর্ববঙ্গের মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশের দাবিতে পাক-সেনার সঙ্গে লড়াই করেছিল। সেসময় ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হন। উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয় এক কোটি মানুষকে। সেই মুজিব-হত্যার শোকাবহ মাস আগস্টেই তাঁর দুই কন্যা হাসিনা ও রেহানাকে দেশ ছাড়তে হল। সঙ্গী রইল কেবল পাহাড়প্রমাণ লজ্জা।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1820423895108718700
bangladesh prime minister