পুরোদস্তুর জননেত্রী তিনি। মিশে যেতে ভালবাসেন জনসাধারণের মাঝে। ছুটে যান তাদের বিপদে-আপদে-বিড়ম্বনায়। এককথায় কাজের মানুষ, কাছের মানুষ। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই দরদী মনোভাব ফুটে উঠল আরও একবার। ক্যানসার আক্রান্ত রাজ্যের প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর চিকিৎসার জন্য বিশেষভাবে উদ্যোগী হলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছেন সাত বারের আরএসপি বিধায়ক। আপাতত কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসারের চিকিৎসা বিপুল ব্যয়সাপেক্ষ। যা প্রাক্তন মন্ত্রীর পরিবার এবং তাঁর দলের পক্ষে ক্রমশই সমস্যার হয়ে উঠছিল। দল ও পরিবারের সদস্যেরা চাইছিলেন, যাতে সরকারি কোনও হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে বিশ্বনাথের চিকিৎসা করানো যায়। কিন্তু কোনও ভাবে তা পারছিলেন না। সোমবার গভীর রাতে মমতার কাছে সেই খবর পৌঁছয়। আর মঙ্গলবার সকাল থেকেই সক্রিয় হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এসএসকেএমের সুপারকে বলেন, যাতে প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথকে ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়। সেই মতো এসএসকেএমের সুপার যোগাযোগ করেন ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সেই হাসপাতালের তরফে যোগাযোগ করা হয় বিশ্বনাথের দলীয় সহকর্মীদের সঙ্গে। বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনকালের মধ্যে প্রায় আড়াই দশক ধরে মন্ত্রিত্ব সামলেছেন বিশ্বনাথ। ১৯৮৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কারা ও সমাজকল্যাণ দফতরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক মতাদর্শগত দিক থেকে তিনি এবং তাঁর দল মমতার সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও ব্যক্তিগত স্তরে প্রবীণ বাম নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে মমতার। প্রয়াত জ্যোতি বসুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধাও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর এমন মানবিক উদ্যোগ অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের খোঁজখবর নিয়েছেন মমতা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পাম অ্যাভিনিউয়ের দুই কামরার ফ্ল্যাটে তাঁকে দেখতে গিয়েছেন। একাধিক বার বুদ্ধবাবু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নিজের উদ্যোগে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোরও ব্যবস্থা করেছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। বুদ্ধ-পত্নী মীরার সঙ্গে দেখা করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের খবর নিয়ে এসেছেন। খবর সংগ্রহে যাওয়া অসুস্থ চিত্রসাংবাদিককে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠানো বা জ্বরে ভুগতে থাকা প্রতিবেশীকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন নিজের উদ্যোগে। বিশ্বনাথের অসুস্থতার পরও তার ব্যতিক্রম হল না। আরও একবার ‘মমতা’ময়ী রূপের সাক্ষী থাকল বাংলা।