এখনও কাটেনি বিভীষিকার আবহ। সোমবার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। উত্তরবঙ্গের ফাঁসিদেওয়ার কাছে নিজবাড়িতে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে সজোরে ধাক্কা দেয় একটি মালগাড়ি। অন্তত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত বেশ কয়েকজন। মঙ্গলবার ভোররাতে সুস্থ যাত্রীদের নিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছল সেই ট্রেন। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রীদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করলেন খোদ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে যাত্রীদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। মৃত্যুভয় এখনও তাড়া করছে তাঁদের। সোমবার সকাল ৮ টা বেজে ৪৫ মিনিটে রাঙাপানির কিছুটা দূরে একটা বিকট শব্দ আর প্রবল ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। তার পর কয়েক মিনিট সবটা স্তব্ধ। সম্বিত ফিরতে যাত্রীরা টের পান, ঘটে গিয়েছে দুর্ঘটনা তড়িঘড়ি শুরু হয় উদ্ধার কাজ। মৃত্যু হয় একাধিক যাত্রীর। আহত বহু। তাঁদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেলে পরিস্থিতি আয়ত্তে এলে ট্রেনটিকে প্রথমে মালদহ পাঠানো হয়। পরবর্তীতে শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা হয় তা।
আজ ভোরে ৩ টে বেজে ২০ মিনিট। শিয়ালদহ স্টেশনের ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢোক সেই অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। যাত্রী সংখ্যা ১২৯৩। স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন ফিরহাদ হাকিম, স্নেহাশিহ চক্রবর্তী, শিয়ালদহের ডিআরএম-সহ একাধিক আধিকারিক। ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতেই একে একে নেমে পড়েন যাত্রীরা। সকলের চোখে আতঙ্ক। কেউ কেউ নেমেই ভেঙে পড়লেন কান্নায়। কেউ আবার ফিরহাদ হাকিমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। স্টেশনে নেমেই কারও মুখে শোনা গেল ভংয়কর সেই দৃশ্যের কথা। রাজ্যের তরফে ব্যবস্থা করা হয়েছিল বাসের। ছিল অ্যাম্বুল্যান্সও। তবে যাত্রীরা সকলেই সুস্থ ছিলেন। ফলত আর প্রয়োজন পড়েনি অ্যাম্বুল্যান্সের।
কেন্দ্রের গাফিলতিতেই দুর্ঘটনা! – উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে আহতদের দেখার পর স্পষ্ট জানালেন মমতা
ছড়িয়েছে আতঙ্ক। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের মুখে রেল। দেশজুড়ে বইছে বিতর্কের ঝড়। দুর্ঘটনার নেপথ্যে কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে আহতদের দেখতে যান তিনি। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাঁর বক্তব্য, “যাত্রী সুরক্ষার দিকে একেবারেই নজর দেয়নি। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো বিলাসবহুল ট্রেন চালু করতে গিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়ন, সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা হয়নি। যার জন্য এই বেহাল দশা। আমি এসব বলতে খারাপ লাগছে। কিন্তু বলতেই হচ্ছে, রেলের চূড়ান্ত গাফিলতির পরিণাম এই দুর্ঘটনা।” এদিন সকালে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই উত্তরবঙ্গে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিমানের সময় নিয়ে সমস্যা থাকায় তিনি পৌঁছন সন্ধের পর। বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমেই তিনি সোজা চলে যান উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ রায় ও অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিক।
প্রসঙ্গত, এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন। তাঁদের সকলের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। চিকিৎসা নিয়ে সবরকম আশ্বাস দেন। এমন বিপর্যয়ের পর দিনরাত চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজের প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মমতা জানান, “এখানে ৪৩ জন ভর্তি। আমি যা দেখলাম, তাতে একজনের অবস্থায় একটু সংকটজনক। বাকি সকলে স্থিতিশীল। আমাদের ডাক্তার, নার্স থেকে প্রশাসনের আধিকারিক সকাল থেকে সবাই খুব ভালো কাজ করেছেন। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। অনেকে ট্রমায় আছেন। নিজেদের বাড়ির ঠিকানা, পরিবারের নাম ঠিকমতো বলতে পারছেন না। আমি প্রশাসনের সকলকে বলেছি, হাসপাতাল থেকে ওঁদের ছেড়ে দেওয়ার পর আলাদা বাসের ব্যবস্থা করতে। সেখানে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে।” এরপর মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মেনে রাত ১২টা থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি হেল্প ডেস্ক করা হচ্ছে। তার দায়িত্বে থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। রাজ্য পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে ছোট মাঝারি ও বড় সরকারি বাসের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে শিয়ালদহ স্টেশনে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস শিয়ালদহ পৌঁছলে সমস্ত যাত্রীকে স্বাচ্ছন্দ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে তাঁদের বাড়িতে।