একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না মেলায় শরিকদের ভরসায় সরকার গঠন করতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। এরই মধ্যে শপথ গ্রহণের ঠিক পরের দিন, সোমবার বিজেপিকে চিন্তায় ফেলে দিল চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি ও একনাথ শিন্ডের শিবসেনা। বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় টিডিপিকে বিমান মন্ত্রক ছেড়ে দিলেও চন্দ্রবাবু নায়ডু এখনও লোকসভার স্পিকারের পদের দাবিতে অনড়। এদিকে, বিজেপি অন্ধ্রপ্রদেশেরই বিজেপি সভানেত্রী ডি পুরন্দেশ্বরীর নাম স্পিকারের পদের জন্য এগিয়ে দিচ্ছে। পুরন্দেশ্বরী তেলুগু দেশমের প্রতিষ্ঠাতা এন টি রাম রাও-এর কন্যা। সেই হিসেবে তিনি চন্দ্রবাবুর শ্যালিকা। শ্যালিকার জন্য জামাইবাবু নিজের দাবি থেকে সরে আসতে পারেন বলে বিজেপি নেতাদের আশা। উল্টো দিকে কংগ্রেসের তরফে চন্দ্রবাবুকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, তেলুগু দেশম স্পিকার পদের জন্য প্রার্থী দিলে কংগ্রেস সমর্থন করতে পারে।
রবিবার চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টির দুই সাংসদ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। রামমোহন নায়ডু পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি শপথ নেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। তেলুগু দেশমের দাবি ছিল পরিকাঠামো সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক। সেই দাবি মেনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তেলুগু দেশমকে বিমান মন্ত্রক ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানিকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক ও যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। সূত্রের খবর, এর পরেও চন্দ্রবাবু লোকসভার স্পিকারের পদের দাবিতে অনড়। তার সঙ্গে এনডিএ-র আহ্বায়কের পদও দাবি করেছেন চন্দ্রবাবু। বুধবার চন্দ্রবাবু অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। রবিবার চন্দ্রবাবু দিল্লিতে মোদীর শপথগ্রহণে ছিলেন। এই সৌজন্যের মধ্যেও টানাপড়েন অব্যাহত রয়েছে।
এনডিএ-তে বিজেপির আর এক গুরুত্বপূর্ণ শরিক নীতীশ কুমারের জেডিইউ-ও স্পিকারের পদ পেতে আগ্রহী। কেন চন্দ্রবাবু ও নীতীশ, দু’জনেই লোকসভার স্পিকারের পদ চাইছেন? লোকসভায় তেলুগু দেশমের ১৬ জন ও জেডিইউ-এর ১২ জন সাংসদ রয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য মোদী সরকারের দুই দলেরই সমর্থন প্রয়োজন। নীতীশ-নায়ডুর আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এনডিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের আঁচ পেলে বিজেপি তাঁদের দল ভেঙে দিতে পারে। দলছুট সাংসদেরা বিজেপিতে যোগ দিলে দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী তাঁদের সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা স্পিকারের হাতেই থাকে। এনডিএ থেকে সরে গেলেও স্পিকারকে পদ থেকে সরাতে লোকসভার ৫০ শতাংশ সদস্যের সমর্থনে প্রস্তাব আনতে হয়। এরই মধ্যে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে আর এক শরিক একনাথ শিন্ডের শিবসেনা জানিয়ে দিয়েছে, তাদেরও একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দিতে হবে।
আসলে শুধুমাত্র একটি প্রতিমন্ত্রীর পদে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ভেঙে বেরিয়ে আসা শিন্ডে শিবির খুশি নন। শিন্ডের দল লোকসভায় সাতটি আসনে জিতে এলেও তাঁদের দলের শুধুমাত্র এক জন সাংসদ, গণপতরাও প্রতাপরাও যাদবকে আয়ুষ মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। দলের সাংসদ শ্রীরঙ্গ বার্নের বক্তব্য, ‘সাত জন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও আমাদের একটি মাত্র প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইচ ডি কুমারস্বামীর জেডিএস-এর দু’জন সাংসদ থাকলেও তারা একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছে। বিহারের জিতনরাম মাঝি তাঁর দলের একাই সাংসদ। তিনিও পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন।’ এমনিতেই মহারাষ্ট্রে বিজেপির আর এক শরিক অজিত পওয়ারের এনসিপি-র নেতা প্রফুল্ল পটেল রবিবার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেননি। কারণ বিজেপি তাঁদের প্রতিমন্ত্রীর পদ দিলেও অজিত পওয়ার-প্রফুল্ল পটেল দু’জনেই পূর্ণমন্ত্রীর পদের দাবিতে অনড়।