সোমবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চের প্রায় ৩০০ পাতার একটি রায়ে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন। যার ফলে প্রশ্ন উঠছে, এবার থেকে কি ছুটির পরে প্রধান শিক্ষক বা সহ-শিক্ষককে স্কুল ভবনে তালা দেওয়ার কাজও করতে হবে? অথবা, মাধ্যমিক স্তরের ইংরেজির শিক্ষককেই কি পড়াতে হবে একাদশ-দ্বাদশের ইংরেজি?
কলকাতা জেলা শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘কলকাতায় পাঁচশোরও বেশি স্কুল রয়েছে। এই জেলার শ’চারেক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। গরমের ছুটির পরে কী ভাবে স্কুলগুলি চলবে, তা নিয়েই সংশয়ে প্রধান শিক্ষকেরা।’ তবে ওই কর্তা জানান, আদালতের রায়ে চাকরি বাতিল হওয়া ওই শিক্ষকদের স্কুলে আসতে এখনও বারণ করা হয়নি। এমন কোনও নির্দেশও শিক্ষা দফতর থেকে আসেনি।
দ্য খিদিরপুর অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ মহম্মদ সালেহিন জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুল থেকে দু’জন শিক্ষক এবং এক জন গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে। ওই দুই শিক্ষকের এক জন ইংরেজির, অন্য জন রসায়নের। সালেহিন বলেন, ‘রসায়নের শিক্ষক ২০১৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন। মাধ্যমিকে তিনি ছিলেন ৪২তম স্থানাধিকারী। এই নিয়োগ বাতিলের দলে তিনিও পড়েছেন। এখন রসায়ন পড়ানোর কেউ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাকরি হারানো ওই গ্রুপ-সি কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল, উদ্ভিদবিদ্যায় এম এসসি এবং বিএড। স্কুলে কম্পিউটারের সব ধরনের কাজের জন্য ওঁর ওপরেই নির্ভরশীল ছিলাম আমরা। এবার কে এই কাজ করবেন?’ বাঙুরের নারায়ণদাস বাঙুর মেমোরিয়াল মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের স্কুলে দু’জন গ্রুপ-ডি কর্মী ছিলেন। এক জন অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। তিনি স্কুলে আসেন না। তাই কর্মরত এক জনই ছিলেন। তাঁরও নিয়োগ বাতিল হল।’
যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানান, তাঁদের স্কুলে চার জন গ্রুপ-ডি কর্মী ছিলেন। এক জন আগেই অবসর নিয়েছেন, এক জন অন্য চাকরি পেয়ে চলে গিয়েছেন, আর এক জন মাসকয়েক আগে মারা গিয়েছেন। কর্মরত যিনি ছিলেন, তিনি ল্যাবরেটরি থেকে শুরু করে নানা দিক সামলাতেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘এবার কি স্কুলে তালা দেওয়ার কাজও সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকদের করতে হবে? স্কুলে ঘণ্টাও বাজাতে হবে শিক্ষকদের?’