ছিয়াত্তর পৃষ্ঠার ইস্তাহারে যেখানে নরেন্দ্র মোদীর তিপ্পান্নটি ছবি রয়েছে, সেখানে কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ মাত্র দু’বার! বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি শব্দ দু’টিও গরহাজির! এবার তা নিয়েই প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস। গতকাল দিল্লিতে বিজেপির দফতরে লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহার প্রকাশের পরে হাত শিবিরের প্রশ্ন, বিজেপির ইস্তাহারে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি নামক শব্দ দু’টি উধাও কেন? রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, ‘বিজেপির ইস্তাহারে ও নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতায় দু’টি শব্দ গায়েব। মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব। মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিষয় নিয়ে বিজেপি আলোচনাই করতে চায় না।’
ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা ভীমরাও আম্বেডদরের জন্মদিনে মোদী যে ইস্তাহার প্রকাশ করেছেন, বিজেপি তাকে সংকল্পপত্র আখ্যা দিয়েছে। তবে কংগ্রেস একে ‘মাফিনামা’ বলেছে। তাদের দাবি, মোদীর দেশের তরুণ, কৃষক, দলিত, আদিবাসীদের কাছে মাফ চাওয়া উচিত। আর আম আদমি পার্টি এর নাম দিয়েছে ‘জুমলাপত্র’। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘বিজেপির ৭৬ পৃষ্ঠা লম্বা ইস্তাহারে ক্যামেরাজীবীর ৫৩টি ছবি। গত দশ বছর ধরে যে ব্যক্তি ক্রমাগত তথ্য বিকৃত করেছেন, প্রকৃত বিষয় খারিজ করে তা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন, এটা আসলে তাঁকে বিদায় উপহার।’
বিজেপি ইস্তাহার প্রকাশের পরে কংগ্রেস সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছে, কংগ্রেসের ইস্তাহারে ৩০ লক্ষ সরকারি চাকরির ‘গ্যারান্টি’র কথা ছিল। বিজেপির ইস্তাহারে তার কোনও প্রসঙ্গ নেই। কংগ্রেস মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিজেপির ইস্তাহারে এ নিয়ে টুঁ শব্দ নেই। চাষিদের দাবিমাফিক ফসলের ন্যূনতম দাম বা এমএসপি-র আইনি নিশ্চয়তার কথা বলেছে কংগ্রেস। বিজেপি এ নিয়ে নীরব। কংগ্রেস সরকারি চাকরিতে মহিলাদের ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গরিব মহিলাদের বছরে ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্যের কথা বলেছে। বিজেপির ইস্তাহারে এর কোনও প্রসঙ্গ নেই।
এখানেই না থেমে তাদের আরও দাবি, কংগ্রেস মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল। বিজেপি নীরব থেকেছে। স্থানীয় মানুষের দাবি মেনে লাদাখকে কংগ্রেস ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে। বিজেপি এ নিয়ে কোনও কথা বলেনি। কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা অভিযোগ তুলেছেন, ‘অতীতের কোনও সরকার এই ভাবে বার বার লক্ষ্য বদলের রোগে ভোগেনি। ২০১৪-য় যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার কতটা পালন হয়েছে, ২০১৯-এ বিজেপি সে বিষয়ে কোনও হিসেব দেয়নি। এখন ২০২৪-এ এসে বিজেপি ২০৪৭-এ ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন দেখাচ্ছে।’
তাঁর প্রশ্ন, ‘বিজেপি ইস্তাহারে বলছে, ২০৩৬-এ অলিম্পিক্স আয়োজন করবে। তখন কে কোথায় থাকবে? তখন কি বিজেপি সরকারে থাকবে? বিজেপির তো গত পাঁচ বছরের কাজের হিসেব দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের কাজের হিসেব দেওয়া উচিত।’ আম আদমি পার্টির নেত্রী অতিশী অভিযোগ তুলেছেন, নরেন্দ্র মোদী বিজেপির ‘জুমলাপত্র’ প্রকাশ করেছেন। তিনি তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের কথা বলেছিলেন। ২০১৯-এ বিজেপির ইস্তাহারেও সেই প্রতিশ্রুতি ছিল। গত নয় বছরে মোদী কোনও চাকরি দেননি। স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার এখন সবথেকে বেশি।