লোকসভা নির্বাচনের আগে অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠা করে নতুন করে ধর্মীয় রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। আর তা নিয়েই অযোধ্যা জেলার ৪ লাখ মুসলিম মানুষের মনে দোলাচল আর আশঙ্কার মেঘ। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় উদযাপনে যেভাবে গোটা সরকার সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়েছে এবং শাসক দল লোকসভা ভোটের আগে সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে তাতে সংশয়ে বহু মানুষ। রামমন্দির প্রতিষ্ঠার কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়েও অযোধ্যার সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ চাইছেন, ধর্মের ভিত্তিতে বিদ্বেষ আর বিভাজন যেন না বাড়ে, পারস্পরিক সৌহার্দ্য যেন অক্ষুণ্ণ থাকে।
প্রসঙ্গত, ধর্মীয় কারণ ছাড়াও অনস্বীকার্য যে রামমন্দিরকে ঘিরে গোটা অযোধ্যা এলাকায় ধর্মীয় পরিচিতির বাইরেও বিশেষ আবেগ কাজ করে। মন্দিরকে কেন্দ্র করে আর্থসামাজিক উন্নয়নের আশায় রয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু উৎসবের উন্মাদনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর রামমন্দিরকে দেখিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা করবে না, এমন কথা অযোধ্যার কোনও মানুষই হলফ করে বলতে পারছেন না। একটি আপাত-অকিঞ্চিৎকর মসজিদ আর তাকে ঘিরে তৈরি হওয়া হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পাল্টে দিয়েছিল ভারতের রাজনীতিকে, সেই তর্ক এখনও জারি রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত তিন দশক ধরে অযোধ্যাকেই হিন্দুত্বের রাজনীতির আঁতুড়ঘর হিসাবে তুলে ধরেছে বিজেপি। রামমন্দিরের আবেগ ব্যবহার করে অন্য সমস্ত সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার রাজনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। তড়িঘড়ি লোকসভা ভোটের আগে অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধনও সেই লক্ষ্য সামনে রেখে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দৌলতে বিতর্কিত জমিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে নতুন রামমন্দির। আরও একটি লোকসভা ভোটের মুখে অযোধ্যাকে ঘিরে হিন্দুত্বের রাজনীতির পুনর্জাগরণ হওয়া নিয়ে আশাবাদী গেরুয়া শিবির। আর তাদের এই উন্মাদনা দেখে সংখ্যালঘু মানুষের মনে প্রশ্ন, মেরুকরণের হাওয়ায় রাজনৈতিক লাভের রুটি সেঁকতে গিয়ে বিজেপির তরফে পরিকল্পিতভাবে বিভেদের বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হবে না তো?