ফের বিস্ফোরক অভিযোগ উঠল ভারতের কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি তথা ডাকসাইটে বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে। দিল্লী পুলিশের অভিযোগ, কুস্তিগিরদের মৃত্যুর হুমকি থেকে টাকার টোপ, নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সবকিছুই করতেন ব্রিজভূষণ! শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি দিল্লীর রউস অ্যাভিনিউ কোর্টে এমনটাই অভিযোগ করা হয়েছে। আদালতে সওয়াল-জবাব চলার সময় বিচারককে দিল্লী পুলিশের আইনজীবী বলেন, “আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে। ব্রিজভূষণ মাঝেমধ্যেই কুস্তিগিরকে মৃত্যুর হুমকি দিত। এমনকি দরকারে তাদের টাকার টোপ পর্যন্ত দিয়েছিল।” কিন্তু কী বলতেন ব্রিজভূষণ? আইনজীবী ফের বলেন,”যদি ভবিষ্যতে কুস্তি খেলতে চাও, তাহলে মুখ বন্ধ করে রাখো। আমি যদি কারও কেরিয়ার গড়তে পারি, তাহলে অনেকের কেরিয়ার শেষও করে দিতে পারি।” প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আইনজীবীর মুখ থেকে এমন কথা শোনা পর চমকে যান দিল্লির রউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিচারক। দিল্লী পুলিশের আইনজীবীর আরও দাবি, ব্রিজভূষণের এমন কাজের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৬ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা উচিত। উল্লেখ্য, দিল্লীতে কুস্তিগিররা ধর্নায় বসেছিলেন। সেই বিক্ষোভের কারণে দিল্লী পুলিশ তারপর ব্রিজভূষণের নামে ডায়েরি নিয়েছিল। এমনকী বিষয়টি জানানো হয়েছে দিল্লীর আদালতেও। আদালতে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যেমন সাক্ষ্য প্রদান চলছে, তেমনি তাঁর পক্ষেও সওয়াল করছেন অনেকেই।
স্বাভাবিকভাবেই একের পর এক চাপে ব্রিজভূষণ কার্যত দিশেহারা। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন, যৌনতার উদ্দেশ্য ছাড়া মহিলাকে আলিঙ্গন বা স্পর্শ করা অপরাধ নয়। তিনি আদালতে বলেন, “কুস্তি এমনই একটি খেলা যেখানে পুরুষ কোচেদের সংখ্যাই বেশি। ছাত্রীর সাফল্যের পর যদি কোনও কোচ উৎসাহের বশে তাঁর ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরেন বা স্পর্শ করেন, তা হলে সেটা কি অপরাধ?” এর মানে তিনি দেশের উঠতি মহিলা কুস্তিগিরের গায়ে হাত দিয়েছিলেন, সেটি মেনে নিচ্ছেন। অথচ তাঁর নামে অভিযোগ, তিনি জাতীয় শিবির চলাকালীন সময়ে সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে জনৈক কিশোরী কুস্তিগিরকে যৌন হয়রানি করেছেন। সেটি একবার নয়, বারবারই। এই নিয়ে দিল্লীর যন্তরমন্তরে ধর্নায় সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগতরা সবাই বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন কুস্তি সংস্থার শীর্ষ কর্তার। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে আরও মারাত্মক অভিযোগ ছিল, তিনি নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শোষণ করেছেন। সেই ধর্না মঞ্চে হাজির ছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। শেষমেশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে সাক্ষী, বজরংরা বিক্ষোভ দেখানো বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি সরকারী দফতরে যোগও দেন। যদিও আদালত বিষয়টিকে নিয়ে তৎপর। আর এর পর ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ আনল দিল্লী পুলিশ। স্বভাবতই মাথাব্যথা বাড়ছে কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতির। চাপে শাসকদল বিজেপিও।