রাজ্যের চা-শিল্পের উন্নয়নে ফের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পথে হাঁটল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। প্রসঙ্গত, কলকাতা এবং হলদিয়ায় বড় মাপের জমি আছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (কলকাতা পোর্ট) বন্দরের অধীনে। সর্বমোট ১১ হাজার একর জমি রয়েছে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের অধীনে। কলকাতায় রয়েছে সাড়ে চার হাজার একর জমি এবং হলদিয়ায় সাড়ে ৬ হাজার একর জমি। এই মোট ১১ হাজার জমিতে চা–পার্ক করতে চায় রাজ্য সরকার। তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে রাজ্য সরকার। এই কাজে যদি সাড়া পাওয়া যায় তাহলে বাংলার চা–শিল্পে জোয়ার আসবে। কারণ, এখানে জমি নিয়ে সেখানে পরিকাঠামো গড়ে তুলে করা যাবে চা–পাতার প্রক্রিয়াকরণ। এদিকে এই পরিকল্পনার কথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে পৌঁছে গিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। এই চা–পার্ক এবং প্রক্রিয়াকরণের কাজ করতে লাগবে ১০ থেকে ১২ একর জমি। এই জমি পেলে তার উন্নয়ন ঘটানো হবে। আর চা–পার্ক গড়ে তোলা হবে। গোটা চা–পার্কটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার গড়ে তুলবে। ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে শুধু সবুজ সংকেত প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েকবার উত্তরবঙ্গ গিয়েছেন। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। সম্প্রতি একটি বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে চা–বাগানে চলে যান। আর চা–শ্রমিকদের সঙ্গে চা–পাতা তোলেন মমতা।
পাশাপাশি, সেই সময় তিনি চা–শ্রমিকদের কাছ থেকে শুনেছিলেন নানা কথা। সেখান থেকে তিনি জানতে পারেন, দার্জিলিং চায়ের পাতা এখানে ফলন হলেও তা বিদেশে পাঠাতে হয় প্রক্রিয়াকরণের জন্য। তার জেরে এই চায়ের পাতার দাম বেড়ে যায়। এই চায়ের পাতা বিদেশের নানা প্রান্তে রফতানি করা হয়। এদেশের চা–পাতা প্রক্রিয়াকরণ বিদেশে না হয়ে যদি এদেশেই হয় তাহলে এত ভাল চায়ের পাতার দাম নাগালের মধ্যে থাকবে। সেক্ষেত্রে এই চা–পাতা যেমন বিদেশে রফতানি করা যাবে, তেমন বাংলার তথা ভারতে বসবাসকারী নাগরিকরাও কম দামে পাবেন। স্বাদ নিতে পারবেন দার্জিলিং চায়ের। তাই এখানে প্রক্রিয়াকরণের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চান মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় চা–পাতা হল দার্জিলিং লিফ। যা এই রাজ্য থেকে রফতানি করা হয় ভিন দেশে। কিন্তু এই চা–পাতার প্রক্রিয়াকরণ হয় দুবাইতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাই চা–পাতার প্রক্রিয়াকরণ করতে এখানে টি–পার্ক গড়ে তুলতে চায়। পরিকাঠামো গড়ে তুলে চা প্রক্রিয়াকরণ করে তা মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দিতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এখানে বাছাই করা পাতা এনে তা প্র্রক্রিয়াকরণ থেকে প্যাকেজিং সব ব্যবস্থা করতে চায়। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর অবশ্য ২০৩০ সালের মধ্যে কলকাতা এবং হলদিয়ার জমি ইকোনমিক জোনে পরিণত করতে চায়। সেখানে এই প্রস্তাব অত্যন্ত কার্যকরী হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।