জনসংযোগে বরাবরই দক্ষ তিনি। এর আগে বারবার তার প্রমাণ পেয়েছে বাংলার রাজনৈতিক আঙিনা। চলতি দুর্গাপুজোয় জনসংযোগ আরও দৃঢ়তর করার কর্মসূচি নিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের বিভিন্ন এলাকায় বস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে জনসংযোগ করেছেন তিনি। পঞ্চমীর দিন সাতগাছিয়া ও বিষ্ণুপুর এলাকায় বস্ত্র বিতরণ করে জনসাধারণকে পুজোর শুভেচ্ছা জানালেন অভিষেক। তবে এদিনও রাজনীতির প্রসঙ্গও উঠে এল তাঁর বক্তব্যে। বললেন, “আমার মেরুদণ্ড সোজা। আত্মসমর্পণ বা মেরুদণ্ড বিক্রি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় করবে না।” বৃহস্পতিবার সাতগাছিয়ার বিদ্যানগর মাল্টিপারপাস স্কুলের মাঠে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ফের একবার মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন অভিষেক। বলেন, “অনেক চেষ্টা করেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার আমার মেরুদণ্ড কিনতে পারেনি। আমি আত্মসমর্পণ করিনি। যেভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি, বিচার ব্যবস্থার একাংশকে কাজে লাগিয়ে আমাকে আক্রমণ করেছে, বাংলার মানুষ সবই দেখেছেন। কিন্তু আজও আমার মেরুদণ্ড সোজা। ওদের কাছে মাথা নত করিনি। জীবন দিতে হলে বাংলার জন্য দেব, দেশের জন্য দেব। আত্মসমর্পণ বা মেরুদণ্ড বিক্রি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় করবে না।” জনগণের উদ্দেশে সাংসদের বলেন, “আপনারা কি চান তৃণমূল গিয়ে বহিরাগত নেতাদের পায়ে পড়ুক? ইডি, সিবিআই যত লাগাবে, তৃণমূলের আন্দোলন, প্রতিরোধ ততই জোরদার হবে। তৃণমূল হল বিশুদ্ধ লোহা। এরা দু-তিনজনকে দেখে বাংলার সমস্ত মানুষকে বিচার করছে। ভাবছে, ইডি, সিবিআইকে দিয়ে টাইট করবে। আর আমরা থমকে যাব। ইডি, সিবিআই লাগিয়ে তৃণমূলকে আটকানো যায়নি, যাবেও না। তৃণমূল হলো বিশুদ্ধ লোহার মতো। যত আগুনে পোড়াবেন ততই শক্তিশালী হবে। মানুষের আন্দোলনও তীব্রতর হবে।” লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়বেন বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
পাশাপাশি, এদিন ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের আটকে রাখার প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, “দিল্লীতে আন্দোলনের আগে মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মোদীর পায়ে ধরে আত্মসমর্পণ করে বাংলার জন্য ভিক্ষে চাইব না প্রতিরোধের রাস্তা গড়ে দিল্লীর বুকে বৃহত্তর আন্দোলনে নেমে মানুষের প্রাপ্য টাকা লড়াই করে ছিনিয়ে আনবো? মানুষ বলেছে, দিল্লী চলো। মানুষের নির্দেশেই আমরা দিল্লীতে আন্দোলনে নামি। আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করেছে। অথচ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে ২০২২ তে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার প্রাপকের বিস্তারিত তালিকা তৈরি করে পাঠায়। কেন্দ্র বলেছিল এক মাসের মধ্যে টাকা দেবে। আসলে বাংলায় হেরেছে বলেই এদের গায়ে এত জ্বালা।” এ প্রসঙ্গেই সাংসদ আরও বলেন, “৫ই অক্টোবর রাজভবন চলো অভিযানে কলকাতার রাজপথে মিছিল করে এসে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। রাজ্যপাল চলে গেলেন। আমাদের সময় দিলেন না। আমরাও মানুষের অধিকারের দাবিতে রাজভবনের বাইরে শান্তিপূর্ণ ধরনায় পাঁচদিন বসে রইলাম। রাজ্যপাল দেখা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। রাজ্যপাল আমাদের যথাযথ দাবি স্বীকার করে নিজে বলেছিলেন, তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনার পর রাজ্যপাল দিল্লিতে যান। ইমেলে আমাকে জানান, আমাদের সমস্ত দাবি দাওয়া অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রের সরকারকে তিনি জানিয়েছেন। বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে। রাজ্যপালকে আমরা বলেছি, এতদিন অপেক্ষা করেছি। আপনি আরও দু-তিন সপ্তাহ সময় নিন। ২১ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলাম। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেখব। যদি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সদুত্তর না পাই বা সদর্থক ভূমিকা লক্ষ্য না করি তবে ১ নভেম্বর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার মাটিতে তৃণমূল কংগ্রেস জোরদার আন্দোলন সংগঠিত করবে।” এদিন নিজের এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজের নানা খতিয়ান তুলে ধরেন অভিষেকের। “গত ৯ বছরে শুধু সাতগাছিয়া বিধানসভায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে রাস্তা হয়েছে। জ্যোতি বসু সাতগাছিয়ার বিধায়ক ছিলেন। ২৪ বছর ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ডায়মন্ড হারবারের বাম সাংসদ ছিলেন জ্যোতির্ময় বসু, অমল দত্ত, শমীক লাহিড়িরা। ডায়মন্ড হারবারের মানুষের জন্য তাঁরা কিছুই করেননি। সুতরাং তৃণমূলের সঙ্গে থাকুন। ভোটের সময় আসা ভোটপাখিদের থেকে দূরে থাকুন। আর যে ক’টা আবর্জনা আছে তা পরিষ্কার করে ফেলুন”, বক্তব্য তৃণমূল সাংসদের।