বিপদের বিন্দুমাত্র আঁচ পায়নি সে একরত্তি। প্রতিদিনের মতো সোমবারও সন্ধ্যার পর বাড়ির উঠোনে একাই বসে আনমনে খেলা করছিল সে। কাজ সেরে তখনও বাড়ি ফেরেননি বাবা-মার। ৭ বছরের ছোট্ট সুনীল খেলায় এমনই তন্ময় ছিল, যে নজরেও পড়েনি, ঝোপের আড়ালে বসে অতি সন্তর্পণে তাকেই নিশানা করছে চিতাবাঘ! তারপর আচমকাই এক লাফ। মুহূর্তের মধ্যে সেই চতুর শিকারির দাঁতের ফাঁকে উঠে এল ৭ সুনীল। তার ঘাড় কামড়ে ধরেই পাশের গভীর জঙ্গলে দৌড়ে পালাল চিতা। ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটের বীরপাড়া ব্লকের ঢেকলাপাড়া চা বাগানে। স্থানীয় সূত্রে খবর, অন্ধকারে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে ছিল চিতাবাঘটি। সুনীলের ঘাড়ে কামড় দিয়ে টানতে টানতে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ততক্ষণে গ্রামবাসীদের চোখে পড়ে গেছে সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য, তাঁদের চিৎকারে প্রায় ১০০ মিটার দূরে টেনে নিয়ে গিয়েও শেষমেশ সুনীলকে ফেলে জঙ্গলে পালিয়ে যায় সেই মানুষখেকো চিতাবাঘ।
এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে সুনীলকে বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান গ্রামবাসীরা। কিন্তু বাঁচানো যায়নি তাকে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা সুনীলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবল উত্তেজনা ছড়ায় বীরপাড়া গ্রামে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন জলপাইগুড়ি বন বিভাগের দলগাঁও রেঞ্জের বনকর্মীরা। কিন্তু তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দেখেই গ্রামবাসীরা ঘিরে ধরেন। বিক্ষোভ দেখান। বারবার কেন হিংস্র পশুর হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, সেই নিয়ে প্রশ্নও তুলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। প্রতিবাদের মাঝে বনকর্মীরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন, তারপর শান্ত হন লোকজন। বস্তুত, মাঝেমধ্যেই কখনও চিতাবাঘ, কখনও বা হাতির হামলায় মাঝে মধ্যেই প্রাণ হারান আলিপুরদুয়ারের মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কগ্রস্ত সারা এলাকা।