গত শুক্রবার উড়িষ্যার বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। আর এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় ২৮৮ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন হাজারের বেশি। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের মধ্যে এ রাজ্যের মানুষও রয়েছেন। আর নিজেদের এ হেন বিপদের জন্য ঘুরিয়ে কেন্দ্রকেই দায়ী করছেন তাঁরা। বলছেন, ১০০ দিনের কাজের টাকা পেলে বাইরে যেতে হত না। যেমন নবদ্বীপের মোহন সিং। তাঁর বাড়িতে মা-বউ-দুই মেয়ে। পাঁচ-পাঁচটা পেট চালাতে ভরসা ছিল মনরেগা প্রকল্প। গ্রামেই ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ করে পরিবারের পেট চালাতেন তিনি। কিন্তু কেন্দ্রের বঞ্চনায় রোজগারের সেই রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। কাজ করার পরেও এক বছর ধরে প্রকল্পের টাকা মেলেনি। আর তাই সংসার চালাতে মিস্ত্রির কাজ নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন মোহন। অন্যান্যবারের মতো গত শুক্রবারও কেরালার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। তারপরই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বালেশ্বরে বাহানাগা স্টেশনে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস।
এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু আতঙ্ক এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে মোহনকে। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। ট্রেন দেখলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ‘ব্ল্যাক ফ্রাই ডে’-র স্মৃতি। একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ১০০ দিনের কাজ থাকলে তো আর বাইরে যেতে হত না। এখানেই টেনেটুনে সংসার চালিয়ে দিতে পারতাম। তাঁর কথায়, ‘এ রাজ্যেই তো কাজ করতাম। কিন্তু ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা মেলেনি। প্রায় ১ বছর টাকা পাইনি। গ্রামে প্রধানকে বললে বলছেন, কেন্দ্র টাকা দেয়নি। তাই মিস্ত্রির কাজ নিয়ে কেরালায় যেতে হল।’ একইসঙ্গে তাঁর আরজি, ‘কেন্দ্রকে বলুন না টাকা দিতে, তাহলে তো বাইরে যেতে হয় না।’ শুধু মোহন সিং না, একই কথা বলছেন বর্ধমানের সুখলাল সরদারও। ১০০ দিনের কাজ করে টাকা মেলেনি। তাই ছেলেকে নিয়ে কেরালায় কাজে যাচ্ছিলেন তিনিও। কিন্তু সেই রাতের দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ছেলেকে। ‘ছেলে নেই, আর কাজের জন্য বাইরে যাব না’, জানাচ্ছেন সুখলাল।