সোমবার দিল্লিতে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এবং প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের সঙ্গে বৈঠক কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের। সে দিকেই এখন তাকিয়ে আছে গোটা দল। চলতি বছরের নভেম্বরেই ছত্তীসগড় এবং মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে রাজস্থানেও বিধানসভা ভোট। কংগ্রেস এই তিন রাজ্যেই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। কিন্তু রাজস্থানে তাদের গলার কাঁটা হয়েছে গেহলট-পাইলট দ্বন্দ্ব।
কর্ণাটকে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী বাছাই-ই শুধু নয়, ভোটের আগে সিদ্দারামাইয়া এবং ডিকে শিবকুমার শিবিরের বিরোধকে কেন্দ্র করে একটা সময় ক্ষমতায় টিকে যাওয়ার ব্যাপারে তুমুল আশাবাদী হয়ে উঠেছিল শাসক দল বিজেপি। রাজস্থানেও কংগ্রেস সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষ মোটের ওপর সন্তুষ্ট। নেই বড় ধরনের কোনও অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ। এখনও জনরোষ বা পালাবদলের জোরালো হাওয়া নেই। বরং তুমুল সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং দলীয় কোন্দলের শিকার বিরোধী পদ্ম শিবিরও। তারপরও তারা ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আশাবাদী গেহলট-পাইলটের বিরোধের কারণে।
কর্ণাটকে শেষ পর্যন্ত খাড়গে শিবকুমারকে রাজি করান উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার জন্য। খাড়গে যেহেতু নিজে দক্ষিণের ওই রাজ্যের নেতা। তাই সিদ্দা ও শিবকুমারকে তাঁর সম্মানের কথা মাথায় রাখতে হয়েছিল। কিন্তু রাজস্থানে তা সম্ভব হবে কিনা, এখনও স্পষ্ট নয়। শচীন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মে মাসের মধ্যে তাঁর দুই দাবি না মানা হলে তিনি ফের রাজ্যব্যাপী আন্দোলনে নামবেন। মুখে না বললেও বোঝাতে চেয়েছেন সেই আন্দোলনের নিশানা করবেন গেহলট সরকারকে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার দুই নেতার সঙ্গে প্রথমে আলাদা কথা বলবেন খাড়গে। বৈঠকে থাকতে পারেন রাহুল গান্ধীও। বরফ গললে দুই নেতাকে মুখোমুখি বসিয়েও কথা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, শচীনের এক নম্বর দাবি, আগের বিজেপি নেত্রী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সরকারের বিরুদ্ধে ২৫ হাজার কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। গেহলট সরকার এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। গেহলট সরকারকে অবিলম্বে তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে। আর তাঁর দ্বিতীয় দাবি, বিধানসভা ভোটে তাঁকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তুলে ধরতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরাকে ভোটের মুখে নিশানা করেছেন শচীন? গেহলটের দাবি, শচীন কংগ্রেসের বিধায়ক ভাঙিয়ে বিজেপির সমর্থনে সরকার গড়তে চেয়েছিলেন। তাতে আপত্তি তোলেন বসুন্ধরা। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসাবেও শচীনকে মেনে নিতে নারাজ।
এদিকে, শচীন একের পর এক অস্বস্তিকর দাবি করে পরিস্থিতি এমন ঘোরালো করে তুলেছেন যে তাঁর মুখ রক্ষার চেষ্টা না হলে তিনি দল ছেড়ে নতুন পার্টি গড়তে পারেন। গুজ্জরদের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব আছে। শচীন সেই পথে এগলে বিজেপির ক্ষমতা দখল আটকানো কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, শচীন কংগ্রেসে থেকে গেলেও বিজেপির সমর্থনে ভোটের পর সরকার গড়ার চেষ্টা করতে পারেন। ফলে শচীনের মুখরক্ষা এখন কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের দায় হয়ে পড়েছে। শোনা যাচ্ছে, কর্ণাটকে ডিকে শিবকুমারের মতো শচীনকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করে টিকিট বণ্টন এবং প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে। ভোটে জয়লাভের পর, মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের দায়িত্ব বিধায়ক দলের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।