এবার ভিক্ষুকদের জন্য অভিনব পদক্ষেপ নিলেন উড়িষ্যার সমাজকর্মী চন্দ্র মিশ্র। তাঁর মতে, মানুষ ভিক্ষা না দিয়ে, বরং ভিক্ষুকদের জন্য বিনিয়োগ করুক মানুষ। ‘ভিক্ষুক কর্পোরেশন’ নামের কোম্পানি খুলেছেন চন্দ্র মিশ্র। তাঁর স্লোগান হলো ‘ডোন্ট ডোনেট, ইনভেস্ট।’ তিনি জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়ায় তিনি ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন ১৪টি ভিক্ষুক পরিবারের জীবনকে। শুধু তাই নয়, চন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, তিনি ছ’মাসের মধ্যে বিনিয়োগের উপর ১৬.৫ শতাংশ রিটার্ন-সহ অর্থ ফেরত দিয়েছেন বিনিয়োগকারীদের। তিনি বলছেন, “আমরা বিনিয়োগ চাই, অনুদান নয়।” চন্দ্র মিশ্র এ বিষয়ে জানিয়েছেন, যে তিনি যখন গুজরাতে ছিলেন, তখনই প্রথম দেখেছিলেন, ভিক্ষুকদের জীবনযাপনও কত উন্নত হতে পারে। মূলত একটি মন্দিরের সামনে লোকজন বসে ভিক্ষা করত, তাই দেখেই এই ধারণা পান তিনি এবং তখনই ঠিক করেন, এই সব ভিখারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান করার চেষ্টা করবেন তিনি। এমনই কর্মসংস্থান নীতি নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করার পরে, বারাণসীতে পৌঁছেছিলেন চন্দ্র মিশ্র। সেটা ২০২০ সাল। বারাণসীর একটি স্থানীয় এনজিও জনমিত্র ন্যাস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে চন্দ্র মিশ্র তাঁদের বলেছিলেন, তাঁর আইডিয়ার কথা। ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থানের জন্য কাজ করা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। ওই এনজিও এবং চন্দ্র মিশ্র একসঙ্গে কাজ শুরু করে। বারাণসীর ঘাটগুলির সমীক্ষার পরে তিনি দেখেন ভিক্ষুকের অভাব নেই বারাণসীতে। তাই তিনি উদ্যোগ নেন সেখানেই ভিক্ষুকদের সচেতন করবেন, কাজ শেখাবেন, উন্নত জীবনের হদিশ দেবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সব কথা জানার পরেও একজন ভিখারীও রাজি হননি চন্দ্র মিশ্রের প্রস্তাবে। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাননি কেউই।
তবে, ২০২১ সালে এই ছবিটা বদলে যায়। তখন করোনার জেরে দ্বিতীয়বার লকডাউন চলছে দেশে। ফলত ভিক্ষুকদের পেটে টান পড়েছে স্বাভাবিক ভাবেই। পর্যটক নেই, লোকজন নেই, ধর্মস্থানগুলি বন্ধ। কে দেবে ভিক্ষা? সেই সময়ে চন্দ্র মিশ্রর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বহু ভিক্ষুক নিজে থেকেই এগিয়ে আসেন। প্রতিষ্ঠা হয় বেগার্স কর্পোরেশনের। চন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, একজন মহিলা সন্তানকে নিয়ে বারাণসীর ঘাটে ভিক্ষা করতেন। তিনিই মিশ্রের কাজে প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁর স্বামী তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল, তাই মহিলার যাওয়ার জায়গা ছিল না। ভিক্ষা করেই দিন কাটত। চন্দ্র মিশ্র তাঁকে ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ দেন এবং তার পরে চাকরিও পান ওই মহিলা। যদিও তা রাতারাতি ঘটেনি। অনেকদিন ধরে প্রশিক্ষণ নেন ওই মহিলা, তার পরে ব্যাগ বানাতে শুরু করেন। তাঁর বানানো সেই ব্যাগগুলি একটি বিশেষ সম্মেলনে পাঠান চন্দ্র মিশ্র। সেখানে অত্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পান তিনি। জীবন বদলে যায় ওই মহিলার। চাকরিও পেয়ে যান তিনি। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে আরও অনেক ভিক্ষুক চন্দ্র মিশ্রর বেগারস কর্পোরেশনে যোগ দেন এবং মিশ্রর এই উদ্যোগও ধীরে ধীরে সুপরিচিতি লাভ করে। এই কাজে চন্দ্র মিশ্রর সঙ্গে প্রথম থেকেই ছিলেন তাঁর পরিবার। ২০২২ সালে সেই পরিবারের তরফেই তিন জনে মিলে ‘বেগার্স কর্পোরেশন’কে সংস্থা হিসেবে নথিভুক্ত করেন চন্দ্র মিশ্র। তবে এটি কোনও এনজিও নয়, এটি রীতিমতো ‘ফর প্রফিট কোম্পানি’ বলেই দাঁড় করিয়েছেন তিনি। এখন সেই কোম্পানির মাধ্যমে ১৪টি ভিক্ষুক পরিবার রীতিমতো উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছে। ১২টি পরিবার ব্যাগ তৈরি করে ব্যবসা করছে। আর দু’টি পরিবার যে মন্দিরে ভিক্ষা করতেন, সেই মন্দিরের সামনেই ফুল-প্রসাদের দোকান দিয়েছেন তাঁরা।
এপ্রসঙ্গে চন্দ্র মিশ্র বলেন, কোম্পানি খোলার পরে তাঁর এই কোম্পানিতে তিনি মাত্র ১০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে বলেছিলেন সকলকে, যাতে তিনি ভিক্ষুকদের জীবন পরিবর্তন করতে পারেন। দেড় মাস ধরে চল তাঁর এই ক্যাম্পেন। প্রথম বিনিয়োগ এসেছিল ছত্তীসগড়ের বাসিন্দা, এক ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে। প্রাথমিকভাবে ৫৭ জন তাঁকে টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়েই তিনি ভিক্ষুকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন এবং তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেন। একটি প্রতিযোগিতায় তিনি সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে খ্যাতিও পান। চন্দ্র মিশ্র জানান, বিনিয়োগ পাওয়ার ছ’মাসের মধ্যে ১৬.৫ শতাংশ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট-সহ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “সত্যি বলতে, আইডিয়া থাকলেও, আমি ভাবিনি যে এই কাজ এত সফলভাবে করতে পারব। তবু আমরা জোর গলায় বিনিয়োগ চেয়েছিলাম, অনুদান নয়। তা আমরা পেয়েছি। সময়মতো ফেরতও দিয়েছি এবং বিনিয়োগকারীরা লাভও করেছে।” মিশ্রের মতে, তিনি যে মডেলে কাজ করছেন, তাতে এক এক জন ভিক্ষুকের জন্য তাঁর দেড় ল…