বিবিসির নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ নিয়ে অব্যাহত তোলপাড়। ইতিমধ্যেই ছবিটি মোদী সরকারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বিগত ২০০২ সালের গুজরাত-দাঙ্গা এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা নিয়ে তিন পর্বের তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছে বিবিসি। ভারতে ছবিটি প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শাসকদল বিজেপি। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চলছে শোরগোল। এবার তা গড়াল দেশের শীর্ষ আদালত অবধি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন আইনজীবী এমএল শর্মা। দেশের শীর্ষ আদালতকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্যচিত্রটিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার এই সিদ্ধান্ত ‘স্বেচ্ছাচারপ্রসূত’ এবং ‘অসাংবিধানিক’।
পাশাপাশি, একই বিষয়ে আর একটি মামলা দায়ের করেন সাংবাদিক এন রাম এবং আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। মামলাটির দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য এটিকে দ্রুত শুনানির জন্য নির্দিষ্ট মামলার তালিকায় নথিবদ্ধ করার দাবি জানান আইনজীবী শর্মা। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রের খবর, আগামী সোমবার মামলাটি শুনবে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। এই বেঞ্চে থাকবেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি পিএস নরসীমহা এবং বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা। উল্লেখ্য, মামলাকারীদের আর্জি ছিল, জরুরি ভিত্তিতে এই মামলা শোনা হোক। কিন্তু তাতে সায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ এই মামলা গ্রহণ করে জানিয়েছে, আগামী সোমবার শুনানি হবে। দু’টি মামলা একসঙ্গেই শুনবে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত, আইনজীবী সিইউ সিংহ এই বিষয়ে আদালতে অভিযোগ জানিয়ে বলেন, “তথ্যপ্রযুক্তি আইনের জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমস্ত সমাজমাধ্যম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বিবিসির তথ্যচিত্রটি। দেশের বহু বিশিষ্ট মানুষ তথ্যচিত্রটি সমাজমাধ্যমে শেয়ার করার পর সেগুলো তুলে নেওয়া হয়। তথ্যচিত্রটি দেখাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও।” দিনকয়েক আগেই কেন্দ্রের তরফে বিবিসি-র তথ্যচিত্রের লিঙ্ক সমাজমাধ্যম থেকে তুলে নেওয়ার জন্য নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। পাশাপাশি, আইটি রুলস ২০২১-এর জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে ৫০টির মতো টুইট তুলে নেওয়ার জন্যও কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়। ছবিটিকে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে দাবি করা হয়েছিল, ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে তথ্যচিত্রটি তৈরি। যদিও বিবিসি দাবি করেছে, যথেষ্ট গবেষণা করে তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। মোদী সরকারের এহেন পদক্ষেপকে ‘সেন্সরশিপ’ আখ্যা দিয়ে প্রবল নিন্দায় সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। নেটমাধ্যমে প্রতিবাদমুখর হয়েছে সাধারণ মানুষও।