অভিনব পরিক্রমা করে নজির গড়লেন কলকাতার প্রৌঢ় লক্ষ্মণ চক্রবর্তী। কুয়াশাবৃত পথে কলকাতা থেকে কালকা প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার পথে সাইকেলেই পাড়ি দিলেন রাজারহাটের লক্ষ্মণ। পরিবেশ রক্ষার্থে স্কুলে স্কুলে গিয়ে দিয়েছেন সবুজের পাঠ। সঙ্গে সাইকেলে করে নিয়ে গিয়েছেন অন্তত ৬০টি গাছের চারা। পাঁচটি রাজ্যের অন্তত ২৫টি স্কুল চত্বরে যত্ন নিয়ে পুঁতেছেন কলকাতার গাছ। কিছু তুলে দিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের হাতেও।
রাজারহাটের বাসিন্দা ৫৯ বছরের লক্ষ্মণ চক্রবর্তী কাজ করতেন কারখানায়। লকডাউনে সেই কাজ চলে যাওয়ার পর জমানো টাকায় চলত সংসার। এরপর ছোটখাটো কাজ করতে শুরু করেন তিনি। একদিন একগাদা মাস্ক কিনে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। হাতে লেখা পোস্টার বোর্ডে সাঁটিয়ে হাতে মাস্ক নিয়ে কখনও শিয়ালদহ, কখনও রাসবিহারী, আবার কখনও বা অন্যান্য রাস্তায় শুরু করেন প্রচার। কেউ মাস্ক না পরলেই তাঁকে ধরে মাস্ক পরার উপযোগিতা সম্পর্কে বুঝিয়ে তাঁকেপরিয়ে দিতেন মাস্ক। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করত কলকাতা পুলিশও।
এদিন লক্ষ্মণ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গাছের সংখ্যা কেন বৃদ্ধি করতে হবে, মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গাছের কী প্রয়োজন, তা স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই প্রচার করার পরিকল্পনা করেন তিনি। যেখানে সেখানে প্লাস্টিক ফেলে দূষণ রোধের জন্যও প্রচারের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু তা শুধু এই রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি লক্ষ্মণ। তিনি ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব,।এই পাঁচটি রাজ্যে ঘুরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন সাইকেলে করে ‘সবুজ প্রচার’-এর। সামান্য যে টাকা হাতে ছিল, তা হাতে নিয়েই সাইকেল সম্বল করে গত ১৮ই নভেম্বর বেরিয়ে পড়েন কলকাতা থেকে। সাইকেলে করে কলকাতা ছেড়ে একের পর এক জেলা ঘুরে ঝাড়খণ্ড সীমান্তে আসার আগেই ছোট একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তিনি। পায়ে আঘাত পান। তাই দিন কয়েক থেমে যেতে হয়। সারিয়ে ফেলেন সাইকেল। এর পর কোনও দিকে না তাকিয়ে হাইওয়ের একপাশ দিয়ে সাবধানে সাইকেল চালিয়ে পার হতে থাকেন ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলি। তাঁর সাইকেলে রাখা জামাকাপড়, কম্বল আর প্রচুর গাছের চারা।
উল্লেখ্য, এভাবেই দিনে ৫০ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত সাইকেল চালিয়ে পাড়ি দিয়েছেন। দিনে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে প্রচার চালিয়েছেন। মানুষ ভালবেসে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন সাহায্য। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতেও কম্বলমুড়ি দিয়ে রাতে ধাবায় ঘুমিয়েছেন। ধাবার মালিকরা তাঁকে ভালবেসে দিয়েছেন খাবার। ফের রোদ উঠতে না উঠতেই চলতে শুরু করেছেন ‘সাইকেল ম্যান’। প্রত্যেক রাজ্যের পাঁচটি স্কুল, যেগুলি রাস্তার কাছেই পড়বে, সেগুলি বেছে নিয়েছিলেন আগে থেকেই। ওই স্কুলগুলির প্রধানশিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার পর ছাত্রছাত্রীদের কাছে সবুজের প্রচার চালিয়েছেন। স্কুলেই পুঁতেছেন গাছ। এভাবে হরিয়ানার কালকায় পৌঁছে এগিয়ে গিয়েছেন পাঞ্জাবের দিকে। এক মাসের মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন পাঞ্জাবে। এরপর ফের প্যাডেলে চাপ দিয়ে ১৮০০ কিলোমিটার পেরিয়ে এখন কলকাতার রাস্তায় তিনি। ফেরার পথেও মানুষের মাঝে সবুজ প্রচার করবেন বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মণ।