সম্প্রতি শুভেন্দু অধিকারীর মুখে বার বার শোনা গিয়েছে ডিসেম্বর তত্ত্ব। গত বৃহস্পতিবারই জল্পনা উস্কে দিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন, ‘১২, ১৪ ও ২১ ডিসেম্বর তারিখ তিনটিতে নজর রাখুন, নিশ্চয়ই কিছু ঘটবে। ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।’ গত সোমবার ছিল ১২ ডিসেম্বর। সেদিন রাজ্যের তৃণমূলের কিছু হয়নি। আজ ১৪ ডিসেম্বরেও কোনও আঁচ লাগেনি শাসকদলের গায়ে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দুর ডিসেম্বর বিপ্লব বড় ধাক্কা খেল। পরপর দু’টো তারিখের বেলুনই ফুটো বেরোল। তাতে তৃণমূল কতটা খুশি সেটা পরের কথা। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বিজেপির মধ্যেই একাংশ বাজি ফাটাচ্ছেন!
ডিসেম্বরের তৃণমূলের জন্য বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে গত কয়েক মাস ধরে একটা ধারণার জন্ম দিতে চেয়েছিলেন শুভেন্দু। তা নিয়ে হইহই পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। কারণ অনেকে অঙ্ক মেলানোর চেষ্টা করছিলেন— একদিকে ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি বাংলায় অতিসক্রিয়, আবার মিঠুন চক্রবর্তীর মতো নব্য গৈরিক নেতা হুমকি দিচ্ছেন যে তৃণমূলের বহু বিধায়ক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। উপরি বহু সরকারি প্রকল্প খাতে দিল্লী টাকা আটকে রেখেছে। ফলে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল, এ ভাবেই কি বাংলায় পালাবদল ঘটিয়ে ফেলবে বিজেপি?
সেই কৌতূহল যখন আকাশ ছুঁতে চাইছে, তখন শুভেন্দু যেন আরেকটু ঘি ঢেলেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, ডিসেম্বরের ১২, ১৪ এবং ২১, এই তিন তারিখ বড় ধাক্কা খাবে বাংলায় তৃণমূল সরকার। কিন্তু কোথায় কী? দেখা গেল, ডিসেম্বরের ১২ তারিখ সুপ্রিম কোর্টে কয়লা পাচার মামলার শুনানি ছিল। তা পিছিয়ে ১৩ জানুয়ারি হয়েছে। বুধবার ১৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি ছিল। তাও পিছিয়ে দিয়ে জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের অনেকে বলতে শুরু করেছেন, ‘শুভেন্দুর দুটো বেলুন ফুটো বেরোল।’ এখন তিন নম্বরে কী হয়, দেখা যাক!
তবে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের তুলনায় বিজেপির মধ্যে একাংশ যেন বাজি ফাটাতে নেমে পড়েছেন। শুভেন্দুর ডিসেম্বর বিপ্লব নিয়ে ইতিমধ্যে বিজেপিতে গৃহদাহ শুরু হয়েছে। দিলীপ ঘোষের অনুগামী নেতারা বলতে শুরু করেছেন, শুভেন্দু যে তিন তারিখের কথা বলছেন, তা আদালতের বিষয়। আদালতের বিষয় নিয়ে আদালতে মীমাংসা হবে। তাতে বিজেপির কী? দিলীপ ঘনিষ্ঠ নেতাদের আরও বক্তব্য, শুভেন্দুর জন্য বিজেপির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। এ যেন কতকটা রাখালের পালে বাঘ পড়ার মতো অবস্থা। এর পর বিজেপির কোনও কথা মানুষ বিশ্বাস করতে চাইবে কেন?