মোদী সরকার ক্ষমতার আসার পরেই বারবার বিপদের মুখে পড়েছে দেশবাসীর বাকস্বাধীনতা। পাশাপাশি বিজ্ঞানমনস্কতা ও চেতনার উপর নেমে এসেছে ধর্ম ও পৌরাণিক কাহিনীর দাপট। নতুন ইতিহাস তৈরি করতে বিলকুল মুছে ফেলা হচ্ছে অতীতের সত্যকে। বিজেপি-জমানায় পুরাণকে বিজ্ঞানের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা রীতিমতো হাস্যকর। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। জানা গিয়েছে, খড়গপুর আইআইটির এক অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসতে চলেছেন রামদেব ও রবি শঙ্কর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আঙিনায় দেশের অন্যতম অগ্রণী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খড়গপুর আইআইটি। সেখানে এমন যোগগুরুদের অতিথি হিসেবে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটি। সংস্থার সম্পাদক প্রত্যুষ শিকদারের কথায়, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোয় আয়ুর্বেদশাস্ত্রকে আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন, সে কারণে প্রাচীন ঐতিহ্য আঁকড়ে না ধরে, আধুনিক গবেষণা করা উচিত। তাঁর সাফ অভিযোগ, রামদেব বা রবি শঙ্করেরা আয়ুর্বেদ, যোগচর্চার নামে ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করছেন। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করছেন সাধারণ মানুষকে।
পাশাপাশি, তাঁর মতে, মোদী সরকার ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের মাধ্যমে অবৈজ্ঞানিক বিষয়ের প্রসার করতে চাইছে। যোগগুরুদের ডেকে বিজ্ঞানের মোড়কে উগ্র আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় চেতনা প্রসারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে আইআইটির মর্যাদা ও গৌরব কালিমালিপ্ত হচ্ছে বলেই মনে করছেন তিনি। যদিও খড়গপুর আইআইটি কর্তৃপক্ষ তা মনে করছেন না। খড়গপুর আইআইটির সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর ইন্ডিয়ার নলেজ সিস্টেমের চেয়ারম্যান তথা অধ্যাপক জয় সেনের মতে, যোগশিক্ষা, আয়ুর্বেদশাস্ত্র নাকি বিজ্ঞানেরই অংশ। তিনি পাল্টা অভিযোগ করছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ করতেই নাকি কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খড়গপুর আইআইটির অনুষ্ঠানটি প্রথমে সায়েন্স সিটিতে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যোগগুরুদের অতিথি হাওয়া নিয়ে ক্রমশই বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিচ্ছিল। ৪ঠা নভেম্বর সায়েন্স সিটির সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচীর কথাও ঘোষণা করা হয়। এরপরেই তড়িঘড়ি অনুষ্ঠানের জায়গা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন রাজারহাটে আইআইটির রিসার্চ পার্ক ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠানটি হবে। তবে কি প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এড়াতেই স্থান বদল করা হল? এমনই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। নেটমাধ্যমেও অব্যাহত নিন্দার ঝড়।