ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে মোদী সরকার। তবে সে কথাগুলি কি আদৌ রাখা রাখা হয়েছে? তথ্য কিন্তু তেমনটা বলছে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে দেশে কৃষকের উপার্জন নাকি দ্বিগুণ হবে। যার সঙ্গে বাস্তব চিত্রের আশমান-জমিন ফারাক। খরচ বৃদ্ধি তো দূর অস্ত, উল্টে কৃষকদের কাঁধেই চাপছে ব্যয়ের বোঝা। মোদী সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নির্দেশ দিয়েছে, এবার থেকে ভাড়া করা লোক দিয়েই জমিতে গ্লাইফোসেটের মতো কীটনাশক ছড়াতে হবে। কৃষি জমিতে ২৪০ টাকার কীটনাশক ছড়াতেই কমপক্ষে ৭৫০ টাকা ব্যয় করতে হবে কৃষকদের। কৃষিমন্ত্রকের এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রতিবাদে সরব হয়েছে ভারতীয় টি বোর্ড। মোদী সরকারের এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া। গত ৪০ বছর ধরে দেশের প্রায় ১২ লক্ষ হেক্টর জমিতে গ্লাইফোসেট কীটনাশকটি ব্যবহার করা হচ্ছে। চা, কফি বাগান, সয়াবিন, রাবার, আখ আর কাপাস তুলো ইত্যাদি চাষে আগাছানাশক হিসেবে গ্লাইফোসেট ব্যবহৃত হয়। হাতে গ্লাভস পরে চাষিরা নিজেরাই এই কীটনাশক ছড়ানে। উল্লেখ্য, গ্লাইফোসেট নিরাপদ ও পরীক্ষিত। ভারতসহ বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ দ্বারা পরীক্ষিত। হঠাৎ করেই তা বন্ধ করতে চলেছে কেন্দ্র। যা ঘিরেই শুর হয়েছে বিতর্কের ঝড়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কৃষিমন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী কৃষক পরিবারের মাসিক গড় আয় ১০ হাজার ২১৮ টাকা। ছয় বছর আগে তা ছিল ৬ হাজার ৪২৪ টাকা। কৃষকের উপার্জন দ্বিগুণ হওয়ার মোদীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। অন্যদিকে, পেস্ট কন্ট্রোল অপারেটরদের দিয়েই জমিতে গ্লাইফোসেট ছড়ানোর নির্দেশ দিয়ে আরও কৃষকদের খরচ বাড়াচ্ছে মোদী সরকার। ভারতীয় টি বোর্ডের তরফে বিষয়টি ফের একবার বিবেচনা করার জন্যে মোদী সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ভারতীয় টি বোর্ডের বক্তব্য, চা বাগানের শ্রমিকরাই চা বাগানে কীটনাশক ছড়ানোর কাজে যথেষ্ট প্রশিক্ষিত। ভাড়া করা লোক দিয়ে তা করা হলে উৎপাদনের খরচও বেড়ে যাবে। অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার ডিজি ডঃ কল্যাণ গোস্বামীর কথায়, পিসিওর মাধ্যমে গ্লাইফোসেট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া একেবারেই অযৌক্তিক। গ্রামীণ এলাকায় পিসিও পাওয়াই যায় না। অন্য জায়গা থেকে ডেকে এনে কীটনাশক ছড়ানোর কাজ করতে গেলে একদিনে গড়ে ৭৫০ টাকার মজুরি দিতে হবে। এমনটা হলে বেড়ে যাবে উৎপাদন খরচ। ফসলের দামে সরাসরি প্রভাব পড়বে। ফলত সমস্যার সম্মুখীন হবে আমজনতাই।ইতিমধ্যেই মোদী সরকারের এই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে কৃষির সঙ্গে যুক্ত নানা মহল। নিন্দার রোল উঠেছে সমাজমাধ্যমেও।