প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল আশার আলো। প্রবল জ্বরে কার্যত সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছিল বছরদশেকের বালিকা। দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও, হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রায় সকলেই। অবশেষে ‘ব্লাড এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন’ পদ্ধতিতে ১০ বছরের ওই বালিকার প্রাণ রক্ষা করল পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ। পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা ওই বালিকা ‘ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়া’-তে আক্রান্ত হয়। আইসিএইচ-এ ওই বালিকার চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূণ গিরি বলেন, “মশাবাহিত এই রোগের ঠিকঠাক চিকিৎসা না হলে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মক রকমের ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাধারণ ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি ২০-৩০ শতাংশকে এই ধরনের ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।” সূত্রের খবর, কার্যত মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিল বালিকাটি। শুধু ওষুধ দিয়ে ফলাফল পেতে যেমন অনেক দেরি হবে তেমনই অন্য ক্ষতির সম্ভবনার দিকটা পর্যবেক্ষণ করেই চিকিৎসকরা শরীরের দূষিত রক্ত বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর তাতেই মিলেছে উল্লেখযোগ্য সাড়া।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ১৬ই অক্টোবর থেকে তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয় ওই বালিকা। কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। কাউকে ঠিকমতো চিনতেও পারছিল না সে। সকলে ডেঙ্গি সন্দেহ করে প্রথমে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করেন। পরীক্ষায় জানা যায় বালিকা ‘ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়া’-তে আক্রান্ত। কিন্তু সেখানে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ না থাকায় ওই বালিকাকে বাইপাসের ধারের আর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। তখন ২০ অক্টোবর পরিজনরা ওই বালিকাকে নিয়ে আসেন আইসিএইচ-এ। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বালিকাটিকে যখন ভর্তি করা হয় তখন তার কোনও জ্ঞান ছিল না। প্রায় কোমাতে আচ্ছন্ন ছিল বলা চলে। দেখা যায়, বিকল হওয়ার মুখে তার যকৃত, ফুসফুস, কিডনি-সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। সমস্ত দিক বিশ্লেষণ করে শেষে চিকিৎসকেরা, ‘ব্লাড এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন’ পদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই বালিকার রক্তে পরজীবীর মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। হাসপাতালের এক শিশু চিকিৎসকের কথায়, ওই বালিকার ধমনী থেকে একটি চ্যানেলের মাধ্যমে দূষিত রক্ত বের করা হয়। আর ‘সেন্ট্রাল লাইন’ চ্যানেল দিয়ে পরিস্রুত রক্ত প্রবেশ করানো হয়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সাড়ে সাতশো মিলিলিটার রক্ত বের করা ও প্রবেশ করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার পরে ওই বালিকাকে ম্যালেরিয়ার ওষুধও দেওয়া হয়েছিল। তাতেই এখন সে মশাবাহিত ওই রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে ওই বালিকা।