এখনও কাটেনি বিপর্যয়ের রেশ। মোদীরাজ্য গুজরাতের মোরবিতে সেতু-দুর্ঘটনা নিয়ে অব্যাহত তোলপাড়। প্রবল নিন্দার মুখে পড়েছে সে রাজ্যের শাসকদল বিজেপি। এবার প্রশ্ন উঠছে, মোরবি সেতু মেরামতে যে সংস্থার দায়িত্ব ছিল, দুর্ঘটনার পরে এফআইআরে সেই সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের নাম কোথায়? শুধু তাই নয়, সেতুর মেরামত-রক্ষণাবেক্ষণে ওই সংস্থাটিকে খোলাখুলি ছাড় দিয়েছিল প্রশাসন। তা হলে এই দুর্ঘটনার দায় স্থানীয় প্রশাসন এবং গুজরাত সরকার এড়াতে পারে কি? মোরবিতে মাচ্ছু নদীর উপর ঝুলন্ত সেতুর রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থার সঙ্গে বিজেপি যোগ নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা৷ ফলত স্বাভাবিকভাবেই চরম বিপাকে পড়েছে গেরুয়া-নেতৃত্ব। ২৩০ মিটার লম্বা এই শতাব্দীপ্রাচীন সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছে ১৪১ জনের। অথচ তার মেরামত হয়েছিল গত সাত মাস ধরে। ওরেভা নামের যে সংস্থাকে সেতু মেরামতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের এমন কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। তারা বরং সিএফএল বাল্ব, দেওয়াল ঘড়ি, ই-বাইক ইত্যাদি বিশেষজ্ঞ। ওরেভা গ্রুপের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড অজন্তা ও অরপ্যাট। এদের ঘড়ি, সিএফএল বাল্ব, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি গোটা দেশে মেলে। পাঁচ দশক পুরনো নামী সংস্থাটির ব্যবসার পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন কেন তাদের সেতু মেরামতির বরাত দিল, তা নিয়েই ঘনীভূত সংশয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য যে ব্যক্তির দিকে সবার আগে অভিযোগের আঙুল উঠছে, তিনি হলেন ‘ওরেভা’র কর্ণধার জয়সুখভাই প্যাটেল। সেতু খোলার আগে ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ তো ছিলই না, সেতুটি পরীক্ষা করেও দেখা হয়নি। মেরামতের পরে যে দিন সেতুটি উদ্বোধন হয়, সেই অনুষ্ঠানে কোনও সরকারি আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু জয়সুখভাই সপরিবারে হাজির ছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে সামনে এসেছে, গুজরাতি নববর্ষে বহু লোক ওই সেতু দেখতে আসবেন, তাই আর্থিক লাভের আশায় তড়িঘড়ি সেতু খুলে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার পর থেকেই বন্ধ ‘ওরেভা’ সংস্থার দফতর। তদন্তের গতিপ্রকৃতি দেখে বিরোধীদের আশঙ্কা, বেসরকারি সংস্থাটির কর্তা-ব্যক্তিদের যেমন আড়ালের চেষ্টা হচ্ছে, তেমনই বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে সরকারি আধিকারিক, নেতা-মন্ত্রীদেরও। বিরোধী নেতৃত্বের অভিযোগ, ওরেভা গ্রুপ নামে ওই সংস্থার কর্ণধার তথা মালিক জয়সুখভাই প্যাটেলের সঙ্গে পদ্মশিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সেই সূত্রেই এই সংস্থাকে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের বরাত দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জয়সুখভাইয়ের একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, ‘ওরেভা’র দু’জন ম্যানেজার, দু’জন শ্রমিক, তিন জন নিরাপত্তাকর্মী এবং দু’জন টিকিট বিক্রেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অর্থাৎ এঁদের সামনে রেখে মূল অভিযুক্তদের আড়ালের চেষ্টা করছে সরকার। খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যে তাঁর দল পরিচালিত সরকারের আমলে সেতু বিপর্যয়ের তদন্তে এত শৈথিল্য কেন, সেই প্রশ্ন তুলেই সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। পাশাপাশি মোদীর সাধের ‘গুজরাত মডেল’কেও তুলোধোনা করেছে তারা।