ভোটের হাওয়ায় ইতিমধ্যেই সরগরম দেশের রাজনৈতিক আবহ। চলতি বছরের শেষেই দুই বিজেপিশাসিত রাজ্য গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই। ক্ষমতা দখলে রাখতে মরিয়া রীতিমতো কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে বিজেপি। গুজরাতে ইতিমধ্যেই কল্পতরু হয়ে প্রকল্প, কেন্দ্রীয় বরাদ্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবার সেখানে, পাকিস্তান-সহ একাধিক প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি ও ইহুদিরা এই সুবিধা পাবেন। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশ থেকে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে এসেছেন। উদ্বাস্তুদের সংখ্যা বাংলায় সর্বাধিক। তার মধ্যে একটা বড় অংশ মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদের। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাককালে নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতুয়াদের ভোট নিয়েছিল বিজেপি। ভোটের পর সিএএকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে, বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হয় তৃণমূল। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মতুয়ারা ভারতের নাগরিক। নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই তাঁদের।
প্রসঙ্গত, সিএএ তৈরির পর অতিক্রান্ত হয়েছে তিন বছর। আজও আইন কার্যকর হয়নি। দেশের শীর্ষ আদালতে সিএএ নিয়ে অজস্র মামলাও চলছে। ইতিমধ্যেই মতুয়া সমাজের কাছে বিজেপির ছবিটা স্পষ্ট হয়েছে। ক্রমশ মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে তাদের। রাজ্যের পুরভোটেই তার প্রমাণ মিলেছে। পঞ্চায়েতেও যে তার প্রভার পড়বে, তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে পদ্মশিবির। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের একবার নাগরিকত্ব আইনকে অস্ত্র করল বিজেপি। গুজরাতে নাগরিকত্ব-হাতিয়ার দিয়েই ভোট-বৈতরণী পেরোতে চাইছে তারা। এপ্রসঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়েরএকটি গোষ্ঠীর বক্তব্য, গুজরাতে ভোট রাজনীতি করছে মোদী সরকার। বাংলায় মতুয়াদের নতুন করে নাগরিকত্ব নেওয়ায় প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব দিতে মোদী সরকারের তরফে কোনও শর্ত রাখা হলে, কী তথ্য চাওয়া হচ্ছে, তা দেখেই পদক্ষেপ নেবে অল ইন্ডিয়া মতুয়া সঙ্ঘ। মতুয়া সম্প্রদায়ের সমর্থন না পেলে বনগাঁ, রানাঘাটসহ বাংলার অনেকগুলি লোকসভা আসনেই বিজেপির ভরাডুবির সম্ভাবনা প্রবল। ফলত স্বাভাবিকভাবেই মতুয়াদের ক্ষোভ প্রবল অস্বস্তিতে ফেলতে পারে গেরুয়া-নেতৃত্বকে।