শারদোৎসবের আমেজে মাতোয়ার সারা বাংলা। আজ চতুর্থী। শনিবারই দেবীর বোধন। পুজোর আবহে জেনে নেওয়া যাক মালদহের চাঁচল বিধানসভার কুশিদায় বিখ্যাত সরকারবাড়ি কথা। যে বাসভবনের দুর্গাপুজোর বয়স প্রায় কুড়ি দশক। একদা হাতির পিঠে চাঁচলের রাজার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন পোকমা এলাকার জমিদার ক্ষেত্রমোহন সরকার। কুশিদায় আসতেই হাতির পা মাটিতে বসে যায়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষেত্রমোহনের আর চাঁচলে যাওয়া হয়নি। কথিত সে রাতেই স্বপ্নাদেশ পান তিনি। তারপর কুশিদাতেই দেবীদুর্গার পুজো শুরু করেন ক্ষেত্রমোহনবাবু। প্রায় দুশো বছর ধরে তাঁর উত্তরপুরুষরা আজও নিষ্ঠার সঙ্গে সেই পুজো করে চলেছেন। চল্লিশ শতক জমির উপর গড়ে উঠেছিল জমিদার ক্ষেত্রমোহনের বাড়ি ও দুর্গাদালান। জমিদারির জাঁকজমক এখন হয়তো নেই। কিন্তু ঐতিহ্য এই পুজোকে নিয়ে গিয়েছে এক অনন্য মাত্রায়।
উল্লেখ্য, সরকারবাড়িতে বোধনের আগে দেবীকে বেনারসি শাড়ি ও সোনার অলংকারে সাজিয়ে তোলেন বাড়ির মেয়ে-বউরা। নিয়ম রীতি মেনে ষষ্ঠীর দিন হয় বোধন। সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান করিয়ে নিয়ে এসে তাঁকে স্থাপন করা হয় দুর্গা দালানে। বেশিরভাগ বনেদি বাড়িতে অষ্টমী তিথিতে কুমারী পূজার চল থাকলেও সরকার বাড়ির দুর্গাপুজোয় কুমারী পুজো হয় দশমী তিথিতে। পাশের নদীতে ঘট বিসর্জনের পরেই নদী থেকে মাছ সংগ্রহ করে আনা হয়। যাকে পুজো করা হবে, সেই কুমারীকে দেখানো হয় সেই মাছ। এও সরকার বাড়ির কুমারী পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দশমীতে দেবীর বিদায়লগ্নে ধুনুচি নাচ এবং সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন সরকার বাড়ির মহিলারা। গোধূলি লগ্নে দেবীর মৃন্ময়ী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় গ্রামের পাশের নদীতে। চাকরি সূত্রে সরকার বাড়ির সদস্যরা গ্রামের বাইরে থাকলেও পুজোর সময় পরিবার নিয়ে সবাই চলে আসেন হরিশ্চন্দ্রপুরের কুশিদার প্রত্যন্ত গ্রামে। এবার এই দুর্গোৎসবের ২২০ বছর। তাই সরকারবাড়িতে পুজো উদযাপনের জৌলুসও অনেকটাই বেশি।