ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি করতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বিগত ২০২০ সালে পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন মমতা। সেই মাটির সৃষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমেই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন একফসলি জমিকে দোফসলি করার ব্যবস্থা করছে রাজ্য। মাটি সৃষ্টি প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের সমন্বয় ঘটিয়ে বহু জমিকে চাষযোগ্য করে তোলা হয়েছে। একফসলি জমি দোফসলিতে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে কৃষি জমি থেকে আয় আরও বাড়বে, এমনই মত বিশেষজ্ঞদের। উক্ত প্রকল্পের আওতায় কেবল সরকারি বা কোনও গোষ্ঠীর জমিকেই নেওয়া হত। সম্প্রতি রাজ্য মাটি সৃষ্টি প্রকল্পের নিয়মে বড়সড় বদল এনেছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন চাষজমিকে দোফসলি করতে উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য। নয়া নিয়মে রায়তি বা চাষীদের নিজস্ব জমিও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৪১টি জায়গায় মোট ১০,৪১৭ একর রায়তি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। যৌথভাবে কাজ করছে ক্ষুদ্র সেচ, কৃষি, উদ্যানপালন, মৎস্য ও পঞ্চায়েত দফতর।
প্রসঙ্গত, মাটি সৃষ্টি প্রকল্প নিয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, কৃষি সচিব ওঙ্কার সিং মিনা, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিব এবং জেলাশাসকরা নবান্নে বৈঠক সারেন। বীরভুম, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পশ্চিম বর্ধমান ইত্যাদি জেলায় ইতিমধ্যেই জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত সমস্ত জমিকে দোফসলি করে তুলে, রবি শস্য চাষের এলাকা ৫৩৪ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ১,৮৭৩ হেক্টর করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে রাজ্য। সর্ষে, সব্জি, তৈলবীজ চাষ বাড়ানো হবে। কৃষি কাজের পাশাপাশি উদ্যান ও পশুপালনের কাজে কৃষকদের যুক্ত করে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে রাজ্য উদ্যানপালনের ক্ষেত্রে আম, মুসাম্বি এবং পেয়ারার মতো নানা ফসলের উৎপাদন বাড়তে উৎপাদন এলাকা ১৪৫ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ৯৬২ হেক্টর করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। উদ্যানপালন ক্ষেত্রের চাষিদের এক লক্ষ হাঁস, মুরগি, ছাগল ও অন্যান্য গবাদি পশু দেবে রাজ্য। কৃষি কাজের জন্যে কৃষকদের মোট ১,৩৫৫টি ছোট-বড় মেশিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। উৎপাদিত পণ্য যাতে কৃষকরা সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও করছে রাজ্য সরকার। বাড়ানো হচ্ছে সুফল বাংলা বিপণন কেন্দ্রের সংখ্যা। উৎপাদিত ফসল সুফল বাংলার দোকানে বিক্রি সুনিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।